আজ (শনিবার) ‘বিশ্ব স্কলেরোডার্মা দিবস’। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রিউমাটোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটি যৌথভাবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সেমিনার ও মতবিনিময়সহ নানা আয়োজন করেছে।
Advertisement
শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে।
সেমিনারে দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, মানুষের শরীরে ছয় শতাধিক বাতরোগ হতে পারে, স্কলেরোডার্মা এদের মধ্যে অন্যতম। ‘স্কলেরো’ শব্দের অর্থ শক্ত, ‘ডার্মা’ শব্দের অর্থ ত্বক বা চামড়া, ‘স্কলেরোডার্মা’ শব্দের অর্থ ‘শক্ত ত্বক বা চামড়া’। এ রোগে সাধারণত ত্বক বা চামড়া শক্ত হয়ে যায়। পাশাপাশি শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও আক্রান্ত হতে পারে। যদি শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়, তাহলে তাকে সিস্টেমিক স্কলেরোসিস বলে।
তারা বলেন, শরীরের নিজস্ব একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, যা নিজ থেকেই শরীরকে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা হঠাৎ যখন পাগলামী শুরু করে এবং নিজের শরীরকে আক্রমণ করে বসে তখন এ জাতীয় রোগ হয়। তবে আজ পর্যন্ত এ রোগের সঠিক কোনো কারণ জানা যায়নি।
Advertisement
এ রোগের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো- শুরুতে হাত ও পায়ের পাতা এবং উপরের তালুসহ আঙ্গুল ফুলে যায়, এরপর চামড়া ধীরে ধীরে মোটা এবং শক্ত হওয়া শুরু করে। কারও কারও ক্ষেত্রে এটি হাতের কনুই এবং পায়ের হাঁটু পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এটি কনুই ও হাঁটুর উপরিভাগসহ মুখমণ্ডল, বুক এবং পিঠের চামড়া আক্রান্ত করতে পারে।
পরবর্তীতে আঙ্গুলের মাথাগুলো চিকন হয়ে যেতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে আঙ্গুগুলের মাথায় ঘা হতে পারে। এ রোগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ঠাণ্ডা পানি বা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় অথবা মানসিক বিষন্নতায় হাতের আঙ্গুল নীল এবং ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। কারও কারও ক্ষেত্রে এ রোগ ত্বকের পাশাপাশি অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রমণ করতে পারে, যেমন: ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, কিডনি, অন্ত্র ইত্যাদি।
আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এ রোগ ত্বক আক্রমণ না করেও ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত করতে পারে। এ রোগে গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা হতে পারে। ফুসফুস আক্রান্ত হলে রোগীরা সাধারণত অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠেন, সেই সঙ্গে খুসখুসে কাশিও হতে পারে। খাদ্যনালী এবং পাকস্থলি আক্রান্ত হলে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে, গলায় খাবার উঠে আসতে পারে ইত্যাদি।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিলন হলে অনুষ্ঠিত সচেতনতামূলক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া।
Advertisement
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আজগর মোড়ল। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ডা. মুজিবর রহমান।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ ও ডা. মো. আবু শাহীন প্রমুখ।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতালির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক মাউরিজিও কাটোলো এবং বেলজিয়ামের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ভেনেসা স্মিথ।
উল্লেখ্য বিএসএমএমইউর রিউমাটোলজি বিভাগ প্রতি বুধবার স্কলেরোডার্মা ক্লিনিকের ব্যবস্থা করে থাকে। যেখানে শুধুমাত্র এ রোগে আক্রান্তদের বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।
এমইউ/এমএমজেড/এমএস