দেশজুড়ে

ডুবে গেল খাগড়াছড়ি, পানিবন্দি পাঁচ হাজার পরিবার

টানা চারদিনের অবিরাম বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় শহরের অধিকাংশ এলাকা ও মেরুং বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে।

Advertisement

সেই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্যায় অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পাশাপাশি পাঁচ শতাধিক পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

সোমবার গভীর রাত দেড়টার পর থেকে জেলায় হঠাৎ পানি বাড়তে শুরু করে। এতে অনেক কাঁচাঘর ও ফসলের খেত ডুবে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় চেঙ্গী ও মাইনী নদীরপানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

এদিকে, নিম্নাঞ্চল ছাড়িয়ে পানি উঠেছে খাগড়াছড়ির বাস টার্মিনাল থেকে কলেজ গেট পর্যন্ত। নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। গত এক দশকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি খাগড়াছড়ি জেলাবাসীকে। সর্বশেষ ২০০৭ সালে খাগড়াছড়িবাসীকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়।

Advertisement

স্থানীয়রা জানায়, জেলা সদরের মুসলিমপাড়া, গঞ্জপাড়া, শান্তিনগর, বটতলী, কল্যাণপুর, ভাঙাব্রিজ, বাঙ্গালকাঠি, চেঙ্গীব্রিজ এলাকা, কালাডেবা ও কমলছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়ি ও ফসলের খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার উদ্যোগে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে চার শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর ছাড়াও রামগড় ও দীঘিনালার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে মাটিরাঙ্গায়। দীঘিনালার মাইনী নদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বর্ষণের কারণে উপজেলার ছোটমেরুং এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানির নিচে ডুবে গেছে মেরুং ইউনিয়ন।

মেরুং ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। শাতাধিক পরিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। সড়কে পানি উঠায় খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়ক ও দীঘিনালা-লংগদু সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।

এদিকে, রামগড়ের গর্জনতলীতে আটকে পড়া ২০ পরিবারকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে এনেছে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় রেডক্রিসেন্ট কর্মীরা। মাটিরাঙ্গা-তানাক্কাপাড়া সড়কের একাধিক স্থানে পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশের নেতৃত্বে কিছু এলাকায় মাটি সরিয়ে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে।

Advertisement

এই টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে খাগড়াছড়িতে আবারও পাহাড় ধস হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও বড় ধরনের পাহাড় ধসের খবর পাওয়া যায়নি। তবে পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে খাগড়াছড়ির কয়েকটি এলাকা। কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। আমরা দুর্গত এলাকার খোঁজখবর নিচ্ছি।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এএম/এমএস