দেশজুড়ে

ঢাকা-টাঙ্গাইলের ‘সুখবর’ হতে পারে ফোরলেন

এবারের ঈদে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক ২টি সেক্টরে ভাগ করে ১০ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।

Advertisement

এছাড়া ১২ জুন চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ফোরলেন পুরোপুরি খুলে দেয়া হলে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি একেবারেই কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। রোববার (১০ জুন) সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চারলেন খুলে দেয়ার ঘোষণায় এমন আশাই করছেন এ সড়কে চলাচলকারীরা

সেতুমন্ত্রী জানান, ওই সড়কের ২৩টি ব্রিজের ওপর দিয়ে গাড়ি চলবে। ঈদ শেষে বাড়ি থেকে ফেরার সময় পর্যন্ত এ সুবিধা দেয়া হবে।

যানবাহনের যাত্রী ও শ্রমিকরা জানান, দেশের যানজটপ্রবণ মহাসড়কের মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অন্যতম। এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ২৬ জেলার ১৫ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদ মৌসুমে যানবাহনের চাপ আরও কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। সড়কটিতে বছরের প্রায় প্রতিদিনই কমবেশী যানজট সৃষ্টি হয়। কোন কোন দিন যানজট দিন-রাতও গড়িয়ে যায়।

Advertisement

এছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চারলেন উন্নিতকরণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে সড়কটিতে মানুষের দুর্ভোগ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এরমধ্যে ধেরুয়া রেলক্রসিং এলাকা যানজট সৃষ্টির অন্যতম একটি স্থান। যমুনা সেতু রেল সংযোগ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১২টি ট্রেন চলাচল করে। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ধেরুয়া রেল ক্রসিং এলাকায় প্রতিদিন ২৪ বার বেরিয়ার ফেলতে হয়। এতে কমপক্ষে ১২০ মিনিট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এখানে সৃষ্ট যানজট কোনো কোনো সময় দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

রোববার মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই থেকে মির্জাপুর বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের পাশে জমাট বাধা কাদা ও মাটির স্তুপ সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে চারলেনের কাজের ভারী কাজ বন্ধ থাকলেও মির্জাপুর বাইপাস বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ওভারব্রিজ নির্মাণের জন্য উভয় পাশে মাটি গর্ত কররে রাখা হয়েছে। এছাড়া ওভারপাস নির্মাণ কাজ চলছে। ওই স্থানে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। চারলেন উন্নিতকরণ কাজে নিয়োজিত আব্দুল মোমেন গ্রুপের গ্রেভার চালক আবুল কালাম ও সার্ভেয়ার দেব দাস জানান, মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক থেকে মির্জাপুর বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশের কাদা ও মাটির স্তুপ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। মহাসড়কের দুই পাশের মাটি শক্ত করতে রোলার করা হচ্ছে।

মহাসড়কের ধেরুয়া রেল ক্রসিং এলাকায় মহাসড়ক উন্নিতকরণ কাজে কর্তব্যরত শ্রমিক শফিকুল ইসলাম, আশিক ও পাভেল জানান, মহাসড়কের রেল ক্রসিং এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয় বেশি। এ কারণে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে মহাসড়কের উত্তরপাশে ১২ ফুট প্রশস্ত করে ইটের সোলিং নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী দুইদিনের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করা হবে বলে তারা জানান।

নির্মাণ কাজে কর্তব্যরত প্রকৌশলী পাপ্পি বলেন, ঈদযাত্রায় যেন কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য আমরা নজর রাখছি। ওভারব্রিজ নির্মাণে সৃষ্ট গর্তে খুব শিগগিরই মাটিভরাট করা হবে।

Advertisement

মির্জাপুর থানার ওসি একেএম মিজানুল হক জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার ও মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে জামুর্কী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার মহাসড়ককে দুইটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এতে ক্যাডেট কলেজ থেকে ধেরুয়া রেলগেট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে গোড়াই হাইওয়ে পুলিশ এবং ধেরুয়া থেকে জামুর্কী পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ। মির্জাপুর অংশে ১৭টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলে একটি সমন্বয় সভাও হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহাসড়কে মোবাইল পেট্রোলিং,স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোটরসাইকেল মোবাইল, ফিক্সড ডিউটি, লিংক রোডে বাঁশকল স্থাপন, রেকার ব্যবস্থা, ঈদের তিনদিন আগে ট্রাক লড়ি ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ রাখা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করতে না দেওয়া, আরিচা রোডের কালামপুর থেকে বালিয়া-উয়ার্শী-মির্জাপুর নতুন রাস্তাটি টাঙ্গাইল অভিমুখে সচল রাখাসহ ঈদের সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক যানজটমুকক্ত রাখতে কমপক্ষে ১০ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন জানান, একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য মির্জাপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরাও প্রস্তুত থাকবেন বলে তিনি জানান।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, ঈদে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে এবং ঘরমুখো মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরতে পারে সেজন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তাছাড়া টাঙ্গাইল সীমানায় ৮শ’ পুলিশ ২৪ ঘণ্টা মহাসড়কে অবস্থান করবে।

এস এম এরশাদ/এফএ/পিআর