রাজনীতি

প্রতিনিধি দলের ভারত সফর নিয়ে অন্ধকারে বিএনপি!

আগামী নির্বাচনে বিএনপি ভারত সরকারের সহায়তা চেয়েছে। তাদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফরে আছেন। তবে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে তারা এ বিষয়টি জেনেছেন।

Advertisement

দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভারত সফরে রয়েছেন। তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশেষ বার্তা নিয়েই এ সফর করছেন।

চারদিনের ভারত সফরে বিএনপির প্রতিনিধি দল সে দেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং শাসক বিজেপি সমর্থক ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ফাউন্ডেশনের’ অধিকর্তা অনির্বাণ গাঙ্গুলির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দফতর, ন্যাশনাল কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সচিবালয় এবং বিজেপির পক্ষ থেকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ’র পক্ষ থেকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অনির্বাণ গাঙ্গুলি বৈঠক করেছেন। এছাড়া বিজেপি এবং কংগ্রেস বিএনপিকে ভারতীয় জনগণের আস্থায় আনার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছে। তাদের এ বার্তা নিয়ে বিএনপির প্রতিনিধি দল লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে যাবেন।

Advertisement

ভারতীয় ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের মানুষ আশা করে বৃহত্তর প্রতিবেশী ভারত যেন বাংলাদেশে একটি গঠনমূলক ভূমিকা রাখে এবং নির্বাচনে একটি মাত্র দলকে সমর্থন না করে। আর হুমায়ুন কবিরের বরাতে বলা হয়েছে, ‘তারেক রহমান ভারতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ বাড়াতে চান।'

এ বিষয়ে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপি ভারতের কাছ থেকে এমন কোনো সাহায্য চায় না। তবে ভারত বিশ্বের অন্যতম বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশও একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশ হতে চায়। এ কারণে বিএনপি চাইছে ভারত যেন বাংলাদেশের পাশে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা ভারতের কাছ থেকে একটি বিষয়ে সহায়তা চাই- আর তা হলো, ভারতের নির্বাচন কমিশন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে, ভারতের জনগণের মনোভাব যেমন তাদের নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়। একইভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও যেন কাজ করে।’

বিষয়টি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, তারা ব্যক্তিগতভাবে গেছে, না পারিবারিকভাবে গেছে। পার্টি থেকে কোনো ডেলিগেশন গেছে বলে আমি জানি না।’

Advertisement

স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘কাগজ পড়ে জেনেছি, তাদের যাওয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটা বড় দল এবং সামনে নির্বাচন। ভারত আমাদের একটি প্রতিবেশী দেশ। ভারতের আমাদের রাজনীতি অর্থনীতি সমাজনীতি এসব কিছুতে ভূমিকা রাখাটা স্বাভাবিক। সেই ক্ষেত্রে তারা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাই তো বলছে।’

এদিকে গত মাসে ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির আমন্ত্রণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারত সফর করেছিল। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, বিএনপিও কি শিগগির ভারত সফর করবে? এ প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘আমরা আমন্ত্রণ পেলে অবশ্যই যাব।’

বিএনপি নেতাদের ভারত সফর নিয়ে রাজনীতি বিশ্লেষক ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ভারতে গিয়ে তারা তাদের পজিশনটা বুঝিয়ে বলেছেন। কিন্তু তারা মূল কথাই বলে নাই। বলা উচিত যে, কেবলমাত্র আমাদের নির্বাচন ইস্যুতে নাক না গলানোই ভালো।’ তিনি বলেন, ‘আমার মতে, তাদের আরও বলা উচিত ছিল, তোমরা আমাদের এখনও পানির ব্যবস্থা করতে পারনি। ভুটান আর নেপালের করিডোরটা যদি দিতে, নেপাল এবং ভুটান থেকে আমরা যদি জলবিদ্যুৎ আনতে পারতাম।’

কেএইচ/ওআর/পিআর