প্রস্তাবিত বাজেটে (২০১৮-১৯ অর্থবছর) স্বাস্থ্য খাতে ২৩ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় এবার দুই হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ঘোষিত হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। এবার বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের শতকরা ৫ ভাগ অর্থ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত ২৩ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ১৮ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা (পরিচালন নয় হাজার ১১৮ কোটি ও উন্নয়ন নয় হাজার ৪১ কোটি টাকা) এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে পাঁচ হাজার ২২৪ কোটি টাকা (পরিচালন তিন হাজার ১২৪ কোটি ও উন্নয়নে দুই হাজার ১০০ কোটি) টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতে এবারও কমিউনিটি ক্লিনিকের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ১২৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে। দরিদ্র, গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আরও ২৩৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ক্রমে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টেলিমেডিসিন সেবাকেন্দ্র ও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’ অর্থমন্ত্রী সামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি পাইলট ভিত্তিতে চালু হয়েছে জানিয়ে বলেন, ‘এ কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিকভাবে দরিদ্র মানুষ স্বাস্থ্যকার্ডের মাধ্যমে বিনা মূল্যে উন্নতমানের সেবা পাবেন। এ কর্মসূচি সফল হলে সারাদেশে তা চালু করা হবে। পাশাপাশি গরিব, দুস্থ ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য মাতৃ ভাউচার স্কিম অব্যাহত থাকবে।’
Advertisement
‘বর্তমানে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত উন্নয়নবিষয়ক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় নতুন সেক্টরেও কর্মসূচি গ্রহণের লক্ষ্যে ধারণাপত্র প্রণয়ন ও কৌশলগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে’- যোগ করেন তিনি।দেশীয় ওষুধ উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের দেয়া সুযোগ অপব্যবহার করছে- এমন মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘উৎপাদিত ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণেরও দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে সরকার সজাগ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব বলেন, টাকার অঙ্কের হিসাবে বাজেটে দুই হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্দির প্রস্তাব করা হলেও বরাদ্দকৃত অর্থে সাধারণ জনগণ কতটুকু উপকৃত হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তিনি বলেন, পরিচালন খাতের অর্থের একটা বিরাট অংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা-বোনাস, ইনক্রিমেন্ট, বিভিন্ন সেবার বিল, ওষুধপত্র ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় খরচ হয়। উন্নয়ন খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের বেশির ভাগই অবকাঠামেো ও যন্ত্রপাতি কেনায় চলে যায়। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ এলাকাভেদে একই থাকে। ফলে যে জেলা ও উপজেলায় প্রয়োজন বেশি সেটি হয়তো কম পায়, আবার যেখানে বেশি অর্থের প্রয়োজন সেখানে বরাদ্দ কম থাকে।
তিনি বলেন, এখনও দেশের ৬০ ভাগ মানুষ নিজের পকেটের টাকা খরচ করে চিকিৎসার ব্যয় মেটান। আধুনিক পদ্ধতিতে বাজেটের অর্থব্যয়, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, মনিটরিং, সুপারভিশন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে সাধারণ মানুষ সুবিধা পাবেন। অন্যথায় টাকার অঙ্ক যতই বাড়ুক সাধারণ মানুষ বিশেষ কোনো সুবিধা পাবে না।
Advertisement
এমইউ/এমএআর/পিআর