আর মাত্র একদিন পরই খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। নগরীর ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৪ জন ভোটার আগামীকাল মঙ্গলবার ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করবেন নবম নগরপিতা। এ সময় তারা ৩১ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের ১০ নারী কাউন্সিলরকেও নির্বাচিত করবেন।
Advertisement
নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নগর জুড়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। নির্বাচন কমিশনও এই নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নগরীতে পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি টহল দেয়া শুরু করেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, কেসিসি নির্বাচনে গত ২৪ এপ্রিল থেকে ৫ জন মেয়র, ১৪৮ জন সাধারণ ও ৩৮ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীসহ মোট ১৯১ জন প্রতীক পেয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন। ভোট গ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে সকল প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ হওয়ায় রোববার রাত ১২টায় প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগসহ সকল প্রকার প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেছে।
নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক, বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলনের মো. মুজ্জাম্মিল হক, জাতীয় পার্টির শফিকুর রহমান ও সিপিবির মিজানুর রহমান বাবু।
Advertisement
এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের ২৮৯টি কেন্দ্রে এ ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটারদের সুবিধার্থে এক হাজার ৪২৮টি স্থায়ী বুথ ছাড়াও ৩৩টি অস্থায়ী বুথ নির্মাণ করা হয়েছে।
এবার ২০২টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ ও ৮৬টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, আনসার ব্যাটেলিয়ন ও আনসার ভিডিপির মোট ২৪ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ৪ হাজার ৯৭২ কর্মকর্তা ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন।
র্যাব-৬ এর পরিচালক খন্দকার রফিকুল ইসলাম ও কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন জানান, নির্বাচনে তিন হাজার ৪৩৭ জন পুলিশ, ১৬ প্লাটুন বিজিবি ও ৩০০ এপিবিএন সদস্য এবং আনসারের চার হাজার ৮শ ৪৫ জন দায়িত্ব পালন করছে।
এপিবিএন ও ব্যাটেলিয়ান আনসারের সমন্বয়ে ৩১টি মোবাইল ফোর্স, ১১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাবের ৩২টি সেক্টর পার্টি, ৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
Advertisement
ইভিএম সূত্রানুযায়ী, কেসিসি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২টি ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। ২৪নং ওয়ার্ডের ২০৬ নম্বর কেন্দ্রে ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২৩৯ নম্বর কেন্দ্রে মোট ১০টি ইভিএম থাকবে।
নির্বাচনের আগে সহিংসতা বন্ধে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য শনিবার মধ্যরাতের মধ্যে বহিরাগতদের নগরী ত্যাগ করার এবং ইঞ্জিন যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নগরীর প্রবেশদ্বারে পুলিশের বাড়তি চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা টহল শুরু করেছেন। ভোট গ্রহণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নগরীতে ২৪ ঘণ্টা সাত প্লাটুন বিজিবি’র টহল জোরদার থাকবে। গত শুক্রবার থেকে অনুমোদনহীন সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সকল পুলিশ ফোর্সদের ইতোমধ্যে সকল প্রকার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার ইউনুচ আলী বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। রোববার মধ্যরাত থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বহিরাগতদের প্রবেশ রোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে দাবি করে তিনি বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সহযোগিতা করছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্নের মাধ্যমে খুলনাবাসীকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কেসিসিতে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২৪ হাজার ৫০৪ জন এবং নারী ২ লাখ ১৬ হাজার ৬২ জন।
আলমগীর হান্নান/এফএ/জেআইএম