দেশজুড়ে

চার কোটি টাকার টার্মিনাল ফেলে সড়কে বাস

মৌলভীবাজার শহরকে যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এবং রাস্তার উপর যত্রতত্র গণপরিবহনের অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে আসার পরিকল্পনায় আট বছর আগে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে মৌলভীবাজার পৌর বাস টার্মিনাল চালু করা হয়। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে উদ্বোধনের আট বছর পার হলেও চালু হয়নি মৌলভীবাজার পৌর বাস টার্মিনালটি। সরকারের ৪ কোটি টাকার অবকাঠামো এখন পরিত্যাক্ত। অন্যদিকে মৌলভীবাজার শহরে বুকে রাস্তা দখল করে গড়ে উঠেছে বাসস্ট্যান্ড যা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ।

Advertisement

সংশিষ্ট সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার শহরকে যানজটমুক্ত করার জন্য শহর এলাকার সড়ক থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে যুগিডর এলাকায় প্রায় ৪ কেটি টাকা ব্যয়ে পৌর বাস টার্মিনালের নির্মাণ করা হয়। ২০০৯ সালের আগস্টে মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন বাস টার্মিনালের উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরিবহন মালিকদের অনীহাসহ নানা কারণে বাস টার্মিনাল তখন চালু হয়নি।

পরে জেলা প্রশাসন পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে ২০১০ সালের ১ নভেম্বর থেকে বাস টার্মিনাল চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে। চালুর পর ঢাকা-মৌলভীবাজার, সিলেট-হবিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ আন্তঃজেলার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল থেকে কিছুদিন চলাচল করে। কিন্তু এরপরেই বাসগুলো টার্মিনাল থেকে সরে আবারেও পৌরসভার ভেতরের প্রধান রাস্তায় অবৈধ স্ট্যান্ডে চলে আসে সেই থেকে টার্মিনালটি আর ব্যবহার করা হয়নি। বর্তমানে ওই টার্মিনাল পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে। বর্তমানে টার্মিনালটি ব্যবহার হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী ইট বালু রাখার জায়গা হিসেবে।

এদিকে শহরের প্রধান প্রধান সড়কের যত্রতত্র বাসস্ট্যান্ড দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজট। শ্রীমঙ্গল রোডে প্রধান সড়কের দুই পাশে ‘ঢাকা বাসস্ট্যান্ড’নামে বর্তমানে গড়ে উঠেছে জেলার প্রধান বাসস্ট্যান্ড। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যানযট, বাড়ছে ভোগান্তি।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, যানবাহন ও যাত্রী শূন্য টার্মিনালটিতে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। টার্মিনালের পার্কিং এলাকায় পৌরসভার উন্নয়ন কাজের ইট বালু পাথর বিটুমিনসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। টার্মিনাল ভবনটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। তবে নির্মাণ সামগ্রী পাহারার জন্য রাতে কয়েকজন শ্রমিক থাকেন। মেঝের টাইলস ভেঙে গেছে। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছ। বিভিন্ন কক্ষের কাচের দরজা খোলা। যানবাহন না আসার কারণে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার নামে বরাদ্দ করা কাউন্টার বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বাস টার্মিনালের ভেতরে বাস ঢোকে না শুধু হবিগঞ্জ-সিলেট রুটের নিদিষ্ট বাস রাস্তার মধ্যে একটু সময় থামে। আর কোনো বাস থামেই না। উদ্বোধনের পর পর এই বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্র এলাকায় অনেক দোকারপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছিল কিন্তু চালু না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

প্রায় তিন একর জায়গার মধ্যে নগর পরিচালনা ও উন্নীতকরণ অবকাঠামো প্রকল্প ও পৌরসভার যৌথ অর্থায়নে এ বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। এতে জমি কেনা, ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য খাতে খরচ হয় ৩ কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫১৯ টাকা।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ মছচ্ছিল আলী বলেন, টার্মিনাল এমন এক এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি যায় না। চালকেরা যেতে চান না। সাধারণ মানুষও সেখানে যেতে চান না। এ টার্মিনালে নেমে শহরে যেতে আরও ২০-৩০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। কারোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করে অপরিকল্পিতথাবে পৌর কর্তৃপক্ষ এটি নির্মাণ করেছে যার ফলে এ অবস্থা।

Advertisement

মৌলভীবাজারের পৌর মেয়র ফজলুর রহমান জানান, আমার পূর্বসুরী মেয়র এটি পরিকল্পিতভাবেই নির্মাণ করে ছিলেন। যারা বলছেন এটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাাণ করা হয়েছে তারা মিথ্যা বলছে। এটি ব্যবহার করার জন্য আমি তাদের অনুরোধ করছি।

রিপন দে/আরএ/এমএস