বিশেষ প্রতিবেদন

হতদরিদ্রদের পুষ্টি চাল দেবে সরকার

অপুষ্টি দূর করতে ফরটিফাইড পুষ্টি চাল দেবে সরকার। মূলত চলমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের হতদরিদ্রদের মধ্যে এ চাল বিতরণ করা হবে।

Advertisement

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে বর্তমানে দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্রকে প্রতিকেজি ১০ টাকা দরে মাসে ৩০ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে। মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে এ চাল দেয়া হয়।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে কুড়িগ্রামের সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় পুষ্টি চাল বিতরণ করা হবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন।

জানা গেছে, মূলত মেশিনের সাহায্যে ছয়টি পুষ্টি উপাদানের সমন্বয়ে ফরটিফাইড রাইস কার্নেল (শাঁস) তৈরি হবে। সাধারণ চালের সঙ্গে সেই কার্নেল মিশিয়ে তৈরি হবে পুষ্টি চাল।

Advertisement

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ) মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, একটা সময় আমরা গরিব ছিলাম। তখন পেটপুরে খাওয়ার কথা চিন্তা করতাম। এখন আমরা সেটার মধ্যে সীমিত থাকতে চাচ্ছি না। এখন চাচ্ছি যাতে নিউট্রেশনটাও কভার হয়। গরিব মানুষের তো সব খাবারের ব্যালেন্স হয় না। ফল বা পুষ্টি জাতীয় খাবার তারা অনেক সময় কিনতে পারে না।

সরকার ডব্লিউএফপির সহায়তা নিয়ে পুষ্টি চাল বিতরণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ চালে ছয়টি পুষ্টি উপাদান থাকবে। ভিটামিন-এ, বি-১, বি-১২, আয়রন, ফলিক এসিড ও জিঙ্ক। এ ছয়টি উপাদান মেশিনের সাহায্যে চালে মিশিয়ে দেয়া হবে। পুষ্টি চাল তৈরির মেশিনটি প্রথমে চীন থেকে আনা হয়েছে। এখন এ মেশিন দেশেই তৈরি হচ্ছে।

‘পুষ্টি উপাদানগুলো বিদেশ থেকে আনা হয়। এরপর সেগুলো মেশিনের সাহায্যে চালের মতো (ফরটিফাইড রাইস কার্নেল) বানানো হয়। এরপর চালের সঙ্গে মিশিয়ে বস্তা প্যাকেট করে দেয়া হবে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রতি ১০০ কেজিতে এক কেজি হারে পুষ্টি চাল মেশানো হবে। এটা মেশিনে অটোমেটিক গড় করে দেবে। এ চালের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে কিন্তু চালের স্বাদের পরিবর্তন হবে না।

Advertisement

যে এলাকায় এ চাল বিতরণ হবে, সেখানে মেশানোর জন্য একটি মিল থাকতে হবে। সে মিল স্থাপনে ছয় লাখ টাকার মতো খরচ হবে বলেও জানান ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে দুই উপজেলায় পুষ্টি চাল দেয়া হবে। শিগগিরই আরও ৩১ উপজেলায় এ চাল দেয়া হবে। তবে এটা পর্যায়ক্রমে সব জেলায় সম্প্রসারণ করা হবে। যেসব এলাকায় পুষ্টিহীনতা বেশি সে এলাকা দিয়ে এ কর্যক্রম শুরু হচ্ছে।

অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, দেশে ৫০ লাখ হতদরিদ্রকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। ধীরে ধীরে ৫০ লাখ পরিবারকেই এর আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে পুষ্টি চাল উৎপাদন ও বিক্রির জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হচ্ছে। যাতে বাজারে এটি সহজেই পাওয়া যায়।

যেভাবে বিতরণ হবে পুষ্টি চাল

সম্প্রতি পুষ্টি চাল বিতরণের ক্ষেত্রে একটি পরিপত্র জারি করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, পুষ্টি চাল মিশ্রণে নির্বাচিত মিল বা ডিলারদের ক্ষমতা দিয়ে সরকারি আদেশ জারি করবে খাদ্য অধিদফতর।

খাদ্য অধিদফতর পুষ্টি চালের কার্নেল সংগ্রহ করবে এবং সাধারণ চালের মিশ্রণের জন্য নির্ধারিত মিশ্রণ মিল মালিকের সঙ্গে চুক্তি করবে।

খাদ্য অধিদফতরের নিয়োগ করা ডিলাররা গুদাম থেকে বরাদ্দ করা সাধারণ চাল ও ডব্লিউএফপির মিশ্রণ মিল মালিকরা চুক্তি অনুযায়ী সাধারণ চাল ও পুষ্টি চাল উত্তোলন করবেন। এরপর সাধারণ চাল ও কার্নেল একত্রে মিশিয়ে পুষ্টি চাল প্রস্তুত করে বস্তা প্যাকেট করবেন।

মিল মালিকরা মিশ্রণের পর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে অনুরোধ জানাবেন। মিলার তার মিলে চালের বস্তা খুলে পুষ্টি চাল মিশ্রণ করে আবার বস্তা প্যাকেট করে বস্তার গায়ে যথাযথ স্টেনসিল করে ডিলারের দোকানে নিজ খরচে ৩০ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের প্রতি বস্তা বুঝিয়ে দেবেন।

মিশ্রণ মিল মালিক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঠিকতার প্রত্যয়ন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ডিলারের কাছে নির্ধারিত পরিমাণ পুষ্টি চাল সরবরাহ করবেন বলে পরিপত্রে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংশ্লিষ্ট ডিলারদের নিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত কার্ডধারীদের জন্য অবহিতকরণ সভার আয়োজন করবেন। সভায় পুষ্টি চালের গুণাগুণ, মজুদ কৌশল, রান্নার পদ্ধতি, পুষ্টি চাল গ্রহণের উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।

পুষ্টি চালে মিশ্রিত ভিটামিন ও খনিজ লবণের ওপর তাপ, পানি ও জলীয় বাষ্পের বিরূপ প্রভাবে পড়ে। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বস্তা গ্রহণের সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে ছেঁড়া, ফাটা বা পানিতে ভেজা কোনো বস্তা যেন গ্রহণ করা না হয়। সরবরাহের পর এবং বিতরণের আগে পর্যন্ত পুষ্টি চালের বস্তা সরাসরি সূর্যের আলোয় ফেলে রাখা যাবে না।

পুষ্টি চালের মিশ্রণ, প্যাকেজিং এবং পরিবহনের ক্ষেত্রে যে কোনো ত্রুটি বা গাফিলতির জন্য মিশ্রণ মিল মালিকদের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব নীতিমালা বা প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরএমএম/এএইচ/এমএস