মার্চ-এপ্রিল দুই মাস পদ্মা-মেঘনায় মাছের অভয়াশ্রম। এই দুই মাস নদীতে জাল ফেলা যাবে না। গত ১ মার্চ থেকে সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে জেলেদের মধ্যে পুনর্বাসনের চাল বিতরণের কথা থাকলেও গত ১৫ দিনেও মেলেনি পুনর্বাসনের চাল।
Advertisement
এদিকে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের সামনেই নদীতে জাল ফেলছেন তারা।
পুনর্বাসনের চাল না পাওয়ায় পেটের দায়ে জীবিকার সন্ধানে বাধ্য হয়েই কোনো কোনো জেলে নদীতে নামলেও অধিকাংশ জেলে পরিবারের দিন কাটছে অনাহারে।
স্থানীয়রা বলছেন, অন্য সময়ের তুলনায় চলমান অভিযানে চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো কঠোরতা দেখা যায়নি। এক কথায় বলতে গেলে এবারের অভিযান চলছে একেবারেই ঢিমেতালে।
Advertisement
নদীর তীরবর্তী কাচিয়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি আশিক মেম্বার বলেন, গত বছর দুই মাসের অভিযানে মাছ ধরার অপরাধে যে পরিমাণ জেলেদের কারাদণ্ড হয়েছে এবার সেই কারাদণ্ড তো দূরের কথা নদীতে সেই পরিমাণ অভিযানও চালানো হয় না।
ইলিশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, নদীতে যে দুই মাসের অভিযান চলছে অবস্থা দেখে তা বোঝার উপায় নেই। কোনো জেলেই মাছ ধরা থেকে বিরত নেই। জাল ও ট্রলার নিয়ে অধিকাংশ জেলেকেই মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামন বলেন, গত বছর সদর উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ৮৪ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অথচ এ বছর অভিযান পরিচালনা করে এ পর্যন্ত ১১৯ জন জেলেকে আটক করলেও এদের মধ্যে কোনো জেলেকে কারাদণ্ড না দেয়ায় তারা সামান্য টাকা জরিমানা দিয়ে আবার নদীতে মাছ ধরতে নেমে যায়। কারাদণ্ড না হওয়াতে জেলেরা মাছ ধরতে উৎসাহী হয়।
এদিকে জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো জেলেরা পায়নি পুনর্বাসনের চাল। জীবিকার সন্ধানে বাধ্য হয়েই নদীতে জাল ফেলছেন তারা।
Advertisement
ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার মোছলে উদ্দিন মাঝি বলেন, আমাদের মতো জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ ছাড়াও দেশের মানুষকেও বাঁচিয়ে রাখে। কিন্তু আমাদের দিকে কারো খেয়াল নেই।
একই এলাকার হারুন মাঝি বলেন, সরকার অভিযান দিয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের মতো গরিব অসহায় জেলেরা কিভাবে চলবে সেই দিকে খেয়াল নেই। অভিযানের ১৫ দিন কেটে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদেরকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা করা হয়নি।
তবে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলার সাত উপজেলায় জেলেদের পুনর্বাসনের চাল পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে চাল আসা মাত্রই তালিকা অনুযায়ী জেলেদের চার মাস হিসেবে ৮ হাজার ৩৪৪ মেট্রিক চাল জেলার সাত উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের বরাবর পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলেরা কেন চাল পায়নি সে সম্পর্কে আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৃধা মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগেই প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বরাবর চালের ডিউ পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কেন চাল বিতরণ করেনি তা আমি সঠিকভাবে বলতে পারছি না।
জেলেদের পুনর্বাসনের চাল দিতে দেরি কেন- জানতে চাইলে সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের চেয়াম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা কয়েক দিন ধরে রাজনৈতিক কারণে ব্যস্ত। তাই জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করার সময় পাইনি। রাজনৈতিক ব্যস্ততা কমলে চাল বিতরণ করা হবে।
তবে জেলার নিবন্ধনকৃত ১ লাখ ৩২ হাজার জেলের মধ্যে ৫২ হাজার জেলের নামে চাল বরাদ্দ আসায় হতাশা প্রকাশ করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা তালিকা অনুযায়ী চাহিদা পাঠিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে পুরাতন তালিকা অনুযায়ী ৫২ হাজার জেলের জন্য চাল পাঠিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত রয়েছে।
আদিল হোসেন তপু/এএম/এমএস