খেলাধুলা

ব্যাঙ্গালোরের হতাশাই হতে পারে আলোকবর্তিকা!

ঠিক শনির দশা বলা যাবে না। তবে মাঝে যে বৃহস্পতি ছিল তুঙ্গে, তা আর নেই। এক কথায় দিন-কাল ভাল যাচ্ছে না টাইগারদের । শুরুটা গত বছরের শেষ দিকে; দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। প্রোটিয়াদের শৌর্য্য-বীর্য্যের কাছে মুখ থুবড়ে পড়া। তারপর ঘরের মাটিতে ভাল করার সম্ভাবনা ও আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতার ঘানি টানা।

Advertisement

এক কথায় লঙ্কানদের সাথে চরমভাবে পর্যদুস্ত হওয়া। তার রেশ না মিটতেই কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফিতে মাহমুদউল্লাহ, তামিম, মুশফিকরা। কাল প্রথম ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

হোক তা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি টোয়েন্টি ফরম্যাট- ভারত আর বাংলাদেশ, অবস্থানগত দিক থেকে দুরত্ব অনেক। টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে ভারতীয়রা ওপরের সারিতে। অবস্থান তিন নম্বরে। আর বাংলাদেশ অনেক নিচে; দশ নম্বরে। একে তো র্যাংকিংয়ের অনেকটা পথ পিছিয়ে থাকা, তারওপর সময়টা খারাপ। তারওপর প্রধান নির্ভরতা ও ব্যাটিং-বোলিংয়ের মূল চালিকাশক্তি সাকিব আল হাসান নেই দলে।

তাই বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা। একটা চাপা ও অস্ফুট সংশয়, শঙ্কা মনে। কি জানি কি হয়- মার্কা অবস্থা। নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মোকাবিলায় একটা অন্যমাত্রা যোগ হয়েছে। শক্তি ও সামর্থ্য ও ক্রিকেট দুনিয়ায় অবস্থানে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ অনেকদুর পিছিয়ে থাকলেও টাইগারদের সাথে ভারতীয়দের লড়াই মানেই এখন একটা অন্যরকম উত্তেজনা। বাড়তি আকর্ষণ। জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতাও।

Advertisement

খুব বেশি দুর পিছন ফিরে তাকাতে হবেনা। দু’বছর আগে (২০১৬ সালের ২৩ মার্চ) ভারতীয়দের সাথে শেষ টি-টোয়েন্টি মোকাবিলাটিও ছিল উত্তেজনার পারদে ঠাসা। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ‘তীরে গিয়ে তরি ডোবে’ টাইগারদের। ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে নিশ্চিত জয় হাছাড়া হয় বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের সময় যতই খারাপ যাক না কেন, ভারতের বিপক্ষে কালকের ম্যাচের আগে ঘুরে-ফিরে ওই খেলাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলকে ভাল করার অনুপ্রেরণা। একটি ম্যাচে জয় ছাড়া আর যা যা করার, দু’বছর আগে এই মার্চ মাসে ব্যাঙ্গালুরুর শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ঠিক তাই করে দেখিয়েছিল বাংলাদেশ।

শেষ ওভারে চার উইকেট হাতে থাকা অবস্থায় টাইগারদের জিততে দরকার ছিল ১১ রানের। ক্রিজে ছিলেন দুই সেট ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

আসুন স্মৃতির আয়নায় দাঁড়িয়ে সে ম্যাচে ফিরে যাই । ভারতের ফাস্ট মিডিয়াম হারদিক পান্ডিয়া ছিলেন বোলার। প্রথম বলে সিঙ্গেলস নিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পাঁচ বলে ১০ রান প্রয়োজন থাকা অবস্থায় পর পর দুই বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সব হিসেব-নিকেশ একদম সহজ করে ফেললেন মুশফিকুর রহীম। দ্বিতীয় বলে এক্সট্রা কভার দিয়ে বাউন্ডারি মুশফিকের।

Advertisement

তৃতীয় বলে মুশফিক স্কুপ করে ভারতীয় অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনির পাশ দিয়ে সীমানার ওপারে বল পাঠিয়ে দেন। একদম জয়ের দোরগোড়ায় বাংলাদেশ। লক্ষ্যে পৌঁছাতে তিন বলে দরকার ২ রান; কিন্তু হায়! এমন সাজানো-গোছানো মঞ্চই কি না হঠাৎ ভেঙ্গে গেল! শেষ তিন বলে ওই দুটি মাত্র রান করা হলো না।

চতুর্থ বলটি স্লোয়ার ছুড়লেন হারদিক পান্ডিয়া। শর্ট অফ লেন্থের ডেলিভারি গতি না ঠাউরে পুল করতে গেলেন মুশফিক। বল আকাশে ভেসে চলে গেল ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা রবীন্দ্র জাদেজার হাতে। তারপরের বলে ভুল পথে হাঁটলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। পঞ্চম বলটি ছিল ফুলটস। ফিল্ডিং লং অফ ও লং অন সীমানার ধারে। অনায়াসে সোজা ব্যাটে খেলে সিঙ্গেলস নিতে পারতেন। তাতে ম্যাচ টাই হয়ে যেত; কিন্তু তা না করে ফুলটস ডেলিভারিকে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে উল্টো ক্যাচ আউট হলেন রিয়াদ। শেষ বলে ২ রান দরকার থাকা অবস্থায় শুভাগত হোম ব্যাটে বলে করতে পারেননি।

অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজ দৌড়ে আসার আগেই ধোনি বেলস তুলে নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠলেন ধোনি। ভারতের মাটিতে তাদেরই হারানোর সুবর্ণ সুযোগ হলো হাতছাড়া।

তারপর আবার কাল হবে দেখা। ঘুরে-ফিরে সেই একই কথা। হঠাৎ হারের বৃত্তে আটকে পড়া। এমন অবস্থায় কি করবে বাংলাদেশ? তবে এবারের ভারত যে দুই বছর আগের ভারতের চেয়ে কমজোরি! এ মুহুর্তে যারা টিম ইন্ডিয়ার মূল স্তম্ভ, সেই বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি, হারদিক পান্ডিয়া আর জসপ্রিত বুমরাহ নিদাহাস ট্রফিতে নেই।

নিজেদের অদুরদর্শি ব্যাট চালনা এবং শেষ ওভারে জয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় সিঙ্গেলসে না খেলে ‘হিরো’ হবার মানসিতা ডুবিয়েছিল দু’বছর আগে বাংলাদেশকে। তারপরও ওই ম্যাচে যে তিন জনের মাপা বোলিংয়ে সহজ হিসেবটাও খানিক কঠিন হয়ে পড়েছিল, সেই অফস্পিনার রবি চন্দ্রন অশ্বিন (৪ ওভারে ২/২০), বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা (৪ ওভারে ২/২২ ) ও পেসার হারদিক পান্ডিয়াও (৩ ওভারে ২/২৯) নেই।

সে ম্যাচের অর্ধেক শক্তি নিয়ে কাল মাঠে নামবে ভারত। কাজেই এ ম্যাচে আর বাংলাদেশ আন্ডারডগ নয়। শক্তির পাল্লা প্রায় সমান। হ্যাঁ সাকিবও নেই, এটা একটা মাইনাস পয়েন্ট অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য। তারপরও ৬ মার্চ কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রোহিত শর্মার নেতৃত্বে যে ভারতকে দেখা গেছে, তার তুলনায় রিয়াদের দল পিছিয়ে নেই তেমন।

এটা যে কোন বিচারে সাম্প্রতিক সময়ের টিম ইন্ডিয়ার চেয়ে বেশ দুর্বল দল। সেই দলের বিপক্ষে জিততে অসাধ্য সাধন করার কিছু নেই। টাইগাররা সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে পারলেই হয়ত জয়ের দেখা মিলবে।

তারপরও ওপরে তামিম-সৌম্য আর লিটন দাসের (সম্ভবত তিন নম্বরে খেলানো হবে তাকে) অন্তত একজনের ব্যাট থেকে বড় ইনিংস আর মাঝখানে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের যে কাউকে জ্বলে উঠতেই হবে।

মোস্তাফিজ পিএসএল খেলে আবার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। কলম্বো গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে ভাল বল করেছেন রুবেল ও তাসকিন। এই তিন পেসারের সাথে মিরাজ আর নাজমুল অপুর সম্মিলনে গড়া স্পিন- রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান ও মানিস পান্ডেদের হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখতে পারলে টাইগাররা জিতেও যেতে পারে।

মোট কথা, ব্যাঙ্গালুরুর হতাশাই আগামীকাল হতে পারে আলোর দিশারি। দু’বছর আগে জয়ের দোরগোড়ায় গিয়ে না পারার হতাশাই ৮ মার্চ কলম্বোয় আলোকবর্তিকা হয়ে দেখা দিতে পারে টাইগারদের জন্য।

‘দু’বছর আগে ভারতের সেরা দলকে তাদের মাটিতে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিলাম। নিজেদের ভুলের জন্য পারিনি। এবারের ভারত তার চেয়ে অনেক কমজোরি। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার শৌর্য্য-বীর্য্যের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে পারলে আমাদের সাথেও পারবে না’- মনের ভিতরে এমন অনুভব জাগ্রত হলেই চলবে বাংলাদেশের।

এআরবি/আইএইচএস/এমএস