অনুশীলনে নিবিড়ভাবে বোলিং করে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তত্ত্বাবধানে ভারপ্রাপ্ত কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। ভাবছেন, পেস বোলিং কোচিং ছেড়ে আবার স্পিনারদের কোচ হয়ে গেলেন নাকি ওয়ালশ! ভাবাটা অযৌক্তিক কিছু নয়। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো ক্লাব মাঠে অনুশীলনে যদি ওয়ালশ ব্যাটসম্যানদেরও টেকনিক শেখাতে শুরু করে, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
Advertisement
কারণ, তিনি যে এখন দলের প্রধান কোচ! শুধুমাত্র পেস বোলারদের বোলিং দেখলেই চলবে না, তাকে এখন প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেরই খোঁজ নিতে হবে, দেখভাল করতে হবে। এই যেমন, অনুশীলনে তিনি নেটে নামিয়ে দিলেন তাসকিন আহমেদকে ব্যাটিং করতে। টেল এন্ডারদের ব্যাটিং দক্ষতা বাড়ানোর এই চেষ্টা তো চন্ডিকা হাথুরুসিংহে থাকার সময় থেকেই চালু হয়েছে।
তাই বলে পেসারদের একেবারেই উপেক্ষা করলেন না। মোস্তাফিজ, রুবেল, রনিদেরও ঝালিয়ে নিলেন কোর্টনি ওয়ালশ এবং তার সঙ্গীরা। নিদাহাস ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগের দিন নিজেদের প্রস্তুতি শেষবারেরমত পরখ করে নেয়ার জন্যই এত আয়োজন। কোচ ওয়ালশ একে একে বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং- সব বিভাগেই খেলোয়াড়দের ঘাম ঝরালেন।
নিদাহাস ট্রফির লড়াই ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা এবং ভারত। ওই ম্যাচে যদিও স্বাগতিকদের কাছে বলতে গেলে উড়ে গেছে বিরাট কোহলিহীন ভারতীয় দল। রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দলটি হেরেছে ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে। মানসিকভাবে সে কারণে ভারতীয়রা কিছুটা হলেও পিছিয়ে। ১৭৪ রান করেও তাদের হারতে হলো ৯ বল বাকি থাকতেই।
Advertisement
বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ ভারতের। অন্যদিকে নিদাহাস ট্রফিতে সূচনা হবে টাইগারদের। ভারতের এই মানসিক অবস্থানে আরও একটি ধাক্কা দিতে প্রস্তুত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। সে লক্ষ্যেই আজ কলম্বোয় এভাবে ঘাম ঝরাতে দেখা গেলো টিম বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে এই ম্যাচ কিংবা এই টুর্নামেন্ট পুরোটাই কোচ কোর্টনি ওয়ালশের জন্য বিশাল একটি পরীক্ষা। এমনিতে বাংলাদেশ রয়েছে টানা ব্যর্থতার মধ্যে। বিশেষ করে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে শুরু করে সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজ, শ্রীলঙ্কার কাছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভরাডুবি, বলতে গেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থাকে আরও তলানীতে নামিয়ে এনেছে।
এ কারণে, শ্রীলঙ্কার নিদাহাস ট্রফি টিম বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটি পরীক্ষা। তারওপর, এই টুর্নামেন্টেও বাংলাদেশ দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বাম হাতের কনিষ্ট আঙ্গুলে যে ছিড় ধরেছে তার সেখানে পড়েছে ১০টি সেলাই। সহসা এই আঘাত সেরে ওঠার মত নয়। যে কারণে, অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন সাকিব। সেখানে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টও নেয়া আছে তার।
অন্যদিকে, চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ার পর এখনও কোচহীন বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য স্থানীয়দের ওপরই আস্থা রেখেছিল বিসিবি। খালেদ মাহমুদ সুজনকে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বানিয়ে দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মাশরাফি এবং সাকিবের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল দল পরিচালনার; কিন্তু দেখা গেলো, বিশাল ফাঁক তৈরি হয়েছে এর মধ্যে। একটিমাত্র পরাজয়ের পরই (ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে ১০ উইকেটে হার) খেলোয়াড়রা যেভাবে ভেঙে পড়েছে, সেখান থেকে তাদেরকে টেনে তোলার, মনোবল চাঙ্গা করার কেউ ছিল না। স্থানীয় কোচদের খুব একটা মান্য না করার অভিযোগ রয়েছে খেলোয়াড়দের বিপক্ষে।
Advertisement
এ কারণে নিদাহাস ট্রফিতে কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কোর্টনি ওয়ালশকে। এটা তার একটি বড় পরীক্ষা যে, তিনি কিভাবে দল পরিচালনা করেন। দলকে টানা ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে কিভাবে তিনি বের করে নিয়ে আসেন। এসবই এখন তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তার ওপর, বোলারদের পারফরম্যান্স যে একেবারে নিন্ম পর্যায়ে চলে গেছে, সেখান থেকে কী উত্তরণ ঘটান তিনি সেটাও দেখার বিষয়। কারণ, নিদাহাস ট্রফির আগে ১৪ পেসার নিয়ে ৯ দিনের নিবীড় অনুশীলন ক্যাম্প চালিয়েছেন কোচ ওয়ালশ।
বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিক হচ্ছে, প্রস্তুতি ম্যাচে জয়। মঙ্গলবার কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব মাঠে শ্রীলঙ্কান বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশকে ৪১ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। রান করেছেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ এবং লিটন দাসরা। বোলাররাও উইকেট পেয়েছেন। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে হয়তো ইতিবাচক কিছুই আশা করা যায় ভারতের বিপক্ষে।
সব মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষেই হয়তো শুরু হবে বাংলাদেশের নতুন পথচলা। কিংবা যে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ, সেখানে আরও নিমজ্জিত হতে থাকবে হয়তো। কোন পথে যাচ্ছে বাংলাদেশ! সেটা জানার জন্য আপাতত অপেক্ষা, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। কারণ, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যে শুরু হবে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি!
আইএইচএস/জেআইএম