জাতীয়

গুলশান টু বকশীবাজার : পথে পথে খণ্ড চিত্র

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় শুনতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে বকশীবাজারের বিশেষ আদালতের পথে বেলা পৌনে ১২টায় রওনা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

Advertisement

এর কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে দলের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে যোগ দেন।

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমের গাড়িও যুক্ত হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় খালেদা জিয়াকে আদালতের উদ্দেশে নেয়া হয়।

বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, রায় শুনতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেলা পৌনে ১২টার দিকে বাসা থেকে বের হন। এর কিছুক্ষণ পর দলীয় নেতাকর্মীরা গাড়িবহরের সঙ্গে যুক্ত হন।

Advertisement

মগবাজারের গাড়িবহরের সঙ্গে যুক্ত হলেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী

মগবাজার মোড়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর পৌঁছালে সেখানে যুক্ত হন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী। গাড়িবহরের সামনে মিছিল করায় এ সময় খালেদা জিয়ার গাড়ির গতি কমিয়ে দেয়া হয়। ধীরে ধীরে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতে থাকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে পাল্টাপাল্টি ইট-পাটকেল নিক্ষেপ

বেলা ১২টার কিছুক্ষণ পর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে পৌঁছায়। এ সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সামনে নিখোঁজ হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দেখা যায়।

Advertisement

খালেদা জিয়ার গাড়িবহর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের মোড় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। এ সময় সেখানে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ইট-পাটকেলের আঘাতে এ সময় কয়েকজন আহত হন। এরই মধ্যে এগিয়ে যায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর।

কাকরাইলে পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ

কাকরাইল মোড় থেকে মৎস্য ভবন মোড়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর আসার আগেই বহরের অগ্রবর্তী বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পাল্টা জবাবে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পুলিশের ধাওয়ায় পিঁছু হটে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় সেখান থেকে একজনকে আটক করা হয়।

ঠিক সে মুহূর্তে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সেখানে পৌঁছে। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে মৎস্য ভবন মোড় পার হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এ সময় সেখান থেকে বিএনপি বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।

কাকরাইল মোড়ে একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

কদম ফোয়ারা মোড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশে বাধা

দুপুর ১টার দিকে পল্টন মোড় থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা শ্লোগান দিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে কদম ফোয়ারার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে এগিয়ে গেলে নেতাকর্মীরা আশপাশের গলিতে ঢুকে পড়েন, কেউ কেউ ফের পল্টনের দিকে চলে যায়। এ সময় চারপাশে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। পুলিশ প্রেস ক্লাবের উল্টোদিকে বিএমএ ভবনের পূর্বপাশের গলির গেট বন্ধ করে দেয়।

কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী : ঠেকানো যাচ্ছে না বিএনপির নেতাকর্মীদের

মগবাজার থেকে মৎস্য ভবন; এ সামান্য পথে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের সঙ্গে যুক্ত হন হাজার হাজার নেতাকর্মী। মগবাজার, মৎস্য ভবন ও কদম ফোয়ারা মোড়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিরাপত্তকর্মী উপস্থিত থাকলেও নেতাকর্মীদের ঢল সামাল দিতে বেগ পেতে হয় তাদের। তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে এগিয়ে যেতে থাকেন।

বকশী বাজার মোড় থেকে সীমিত যান চলাচাল

খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে বকশিবাজার মোড় অতিক্রম করে। এ সময় নির্দিষ্ট কিছু গাড়ি ছাড়া সব গাড়ি আটকে দেয়া হয়। বেলা পৌনে ২টার দিকে খালেদা জিয়া আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছান।

বাসা থেকে রওনা দেয়ার খবরে বকশী বাজার ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

খালেদা জিয়ার গাড়িসহ নির্দিষ্ট কয়েকটি গাড়ি প্রবেশের পর ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করে দেয়া সাধারণের প্রবেশও।

বকশীবাজার মোড়ে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদেরও আটকে দেয়া হয়। এ সময় সেখানে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

দুই ঘণ্টার মাথায় আদালত প্রাঙ্গণে খালেদা জিয়া

গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে বের হওয়ার দুই ঘণ্টার মাথায় বকশীবাজারের বিশেষ আদালতে পৌঁছান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আওয়ামী লীগের মিছিল

পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আদালত এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায়।

জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীতে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যে কোনো ধরনের মিছিল-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের ১০০ গজ দূরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।

মিছিলে অংশ নেন ২৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘আগুন সন্ত্রাসী খালেদা জিয়ার বিচার চাই বিচার চাই’- শ্লোগান দেয়। এছাড়া আদালতের চারপাশে বিভিন্ন সড়কে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়।

এছাড়া রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন অলিগলির মুখে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।

বাধন ও সাইফুল নামে দুই সন্দেহভাজন আটক

বাধন ও সাইফুল ইসলাম নামে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। হাইকোর্টের সামন থেকে বেলা ১২টার দিকে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করার জন্য আজ দিন ধার্য রয়েছে। রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করবেন।

গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজ (৮ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন। ১২০ কার্যদিবসের বিচারকার্য শেষ হয়েছে ২৩৬ দিনে। আত্মপক্ষ সমর্থনে গেছে ২৮ দিন। যুক্তি উপস্থাপন হয়েছে ১৬ দিন এবং আসামি পক্ষ মামলাটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন ৩৫ বার।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক।

পরে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

এমএআর/আরআইপি