চিকিৎসা একটি মহান পেশা। সেজন্য চিকিৎসকদের দায়িত্বশীলতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অনেক ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের সামান্য অবহেলা, অসচেতনতা কিংবা দায়িত্বহীনতা ডেকে আনতে পারে মারাত্মক পরিণতি। তাই চিকিৎসাসেবার প্রতিটি স্তরে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে চিকিৎসকরা যে ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) লেখে থাকেন তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকে দুর্বোধ্য। এ কারণে ওষুধের নাম ঠিকমত পড়তে না পারায় ভুল ওষুধ দেন দোকানদাররা। এতে রোগ সারার বদলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এই বাস্তবতায়ই ইতোপূর্বে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) পড়ার উপযোগী ও স্পষ্ট এবং বড় অক্ষরে কম্পিউটার মুদ্রণের মাধ্যমে লেখার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
এছাড়া চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম (ওষুধের মূল কেমিক্যাল কম্পোজিশনের নাম) না লিখে ব্র্যান্ডের নাম লিখে থাকেন। এতে পছন্দ অনুযায়ী কোম্পানির ওষুধের নাম লেখার সুযোগ থাকে। অভিযোগ আছে, ওষুধের মান যাই হোক কমিশন বাণিজ্যের অনৈতিক লোভে অনেক চিকিৎসক তাদের পছন্দ অনুযায়ী কোম্পানির ওষুধের নাম লেখেন ব্যবস্থাপত্রে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হন রোগীরা। উচ্চদাম দিয়েও নিন্মমানের ওষুধ কিনতে বাধ্য হন মানুষজন। চিকিৎসকদের এ ধরনের অনৈতিক প্রবণতা বন্ধে প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা উচিত। তাতে পছন্দের কোম্পানির ওষুধের নাম লেখার আর সুযোগ থাকবে না। এজন্য প্রয়োজনে আইন করতে হবে। এবং তা দ্রুত।
দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু গোড়ায় গলদ রেখে কাঙ্খিত সাফল্য পাওয়া যাবে না। সেজন্য আদালতের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চলছে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত মাস ফ্রেব্রুয়ারি। এই মাসে নতুন করে ভাষাচেতনা জেড়ে ওঠে। কিন্তু এটা সারাবছরেরই ব্যাপার। নিজের মাতৃভাষার প্রতি সম্মান দেখানোর কোনো বিকল্প নেই। সবচেয়ে ভাল হয় ব্যবস্থাপত্র বাংলায় লেখলে। যিনি লেখছেন এবং যার জন্য লেখছে তারা সকলেই বাংলাভাষী। কাজেই ইংরেজিতে ব্যবস্থাপত্র লেখার কোনো মানে হয় না। তাই জনস্বাস্থ্যের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবহেলার কোনো সুযাগ নেই। বাংলায়ই লেখা হোক ব্যবস্থাপত্র।
Advertisement
এইচআর/এমএস