বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতে পাট থেকে ডেনিম কাপড় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথমে পাট ও তুলার মিশ্রণে সুতা তৈরি হচ্ছে। সেই সুতা থেকে বানানো হচ্ছে ডেনিম কাপড়। উৎপাদিত কাপড় থেকে প্যান্ট, জ্যাকেট, শার্টের মতো পোশাক বানিয়ে রপ্তানি করা হবে। পাশাপাশি দেশের বেসরকারি খাতে কাপড় সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) ইতোমধ্যে পাট থেকে ডেনিম কাপড় উৎপাদন করেছে। এ কাপড় ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে।
Advertisement
এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলায় বিজেএমসি’র রিজার্ভ প্যাভিলিয়ন ২এ-এর দায়িত্বরত ম্যানেজার (মার্কেটিং) মো. জাকির হোসাইন খান বলেন, দেশে তৈরি ডেনিম কাপড়ের ৫০ শতাংশ রয়েছে পাট এবং বাকি ৫০ শতাংশ কটন। গুণগত মানের দিক দিয়ে বর্তমানে বাজারে যে ধরনের ডেনিম কাপড় রয়েছে সেগুলোর চেয়ে এ কাপড়ের মান কোনো অংশে কম নয়। পরিবেশবান্ধবের দিক দিয়ে এগুলো অনেক ভালো।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তারা ডেনিম কাপড় উৎপাদন শুরু করেছেন। তবে এখনো বাণিজ্যিকভাবে বাজারে এ কাপড় ছাড়া হয়নি। শিগগিরই বাজারে তা ছাড়া হবে।
সূত্র জানায়, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ইউনিট নামে এ কারখানা স্থাপন করেছে বিজেএমসি। এখান থেকে ডেনিম কাপড় তৈরি হচ্ছে। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অধীন অধিকাংশ পাটকল লোকসানে রয়েছে। বন্ধও রয়েছে অনেক পাটকল। জানা গেছে, দেশের পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি, পাটের বহুমুখী ব্যবহার এবং ডেনিমের বিশ্ববাজার ধরতে এ উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাট ও তুলা এবং একই রকম আঁশ জাতীয় দ্রব্যের সংমিশ্রণে সাশ্রয়ী মূল্যে সুতা উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। এ পদ্ধতি ব্যবহারে উন্নতমানের ডেনিম কাপড় তৈরি করা যাবে। যা থেকে উন্নতমানের ডেনিম প্যান্ট, জ্যাকেট ও শার্ট তৈরি হবে। এসব পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে যেমন অতিরিক্ত রপ্তানি আয় হবে, তেমনি দেশের কারখানাগুলো চালু থাকবে- এমনটি মনে করছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়।
Advertisement
পোশাক শিল্পের জন্য তিন স্তরের জিএসপি সুবিধা আদায় করতে পরিবেশবান্ধব সংমিশ্রিত সুতা ও কাপড় উৎপাদনে সাহায্য করবে। ডেনিম উৎপাদনের পর অতিরিক্ত সুতা থেকে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা যায় এমন বস্ত্র ও পণ্য তৈরি হবে।
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। জামালপুরের মাদারগঞ্জে কারখানা স্থাপন করবে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। বিজেএমসি’র খালি জমিতে এ কারখানা নির্মিত হবে। চলতি বছর শুরু করে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
পাট উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। পাটের বহুমুখী ব্যবহারের জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এতোদিন পাট থেকে কার্পেট, বস্তা, চট, রশির মতো পণ্য তৈরি হতো। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি খাতও একই ধরনের কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হবে। এতে দেশে পাটের চাহিদা বাড়বে। কৃষি ও শিল্প খাতে কর্মসংস্থান বাড়বে।
প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে তিন হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। বাড়বে রপ্তানি আয়। কারণ পাট ও তুলার মিশ্রণে সুতা তৈরি করে সেই সুতার তৈরি কাপড় এবং কাপড় থেকে পোশাক তৈরি করা গেলে তিন স্তরের জিএসপি সুবিধা পাওয়া যাবে।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, এ কারখানা থেকে বছরে চার লাখ ৩২ হাজার ডজন ডেনিম প্যান্ট তৈরি করে রপ্তানি সম্ভব। এছাড়া দুই কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার গজ ডেনিম ও অন্য কাপড় উৎপাদন করা যাবে, যা দেশের পোশাক কারখানায় সরবরাহ হবে।
তবে সরকারের এমন বাণিজ্যিক উদ্যোগের সফলতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের অধিকাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান লোকসানে রয়েছে। বিজেএমসিও ব্যাপক লোকসান দিচ্ছে প্রতি বছর। ফলে এ সংস্থার ব্যবস্থাপনায় নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে- এমন প্রত্যাশা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে ভাবতে হবে। এজন্য প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায়ও সরকারি সংস্থাটি প্রকল্পটির সফলতা কীভাবে নিশ্চিত করবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিজেএমসির অধীনে বর্তমানে ২৬টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পাটবহির্ভূত পণ্যের।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিজেএমসির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল ৬৫৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
এমইউএইচ/এমএআর/জেআইএম