অর্থনীতি

মেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘পাটের পলিব্যাগ’

মেলার অন্যতম আকর্ষণ ‘পাটের পলিব্যাগ’

পরিবেশের বিরুদ্ধে পলিথিন এক ভিলেনের নাম। বাংলাদেশের শহর-নগরে একটুখানি বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। এর অন্যতম প্রধান কারণ পলিথিন। যে নদীর তীরে গড়ে ওঠেছে রাজধানী ঢাকা, সেই বুড়িগঙ্গার তলদেশেও মিলেছে পলিথিনের স্তূপ। তাই পরিবেশবান্ধব পলিথিনের বিকল্প উদ্ভাবন ছিল একটি স্বপ্নের নাম।

Advertisement

এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) ইতোমধ্যে পাটের পলিব্যাগ তৈরি করেছে, যা ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রদর্শন হচ্ছে। নাম দেয়া হয়েছে ‘সোনালী ব্যাগ’। তবে এখনো পাটের এ পলিব্যাগের বাণিজ্যিকভাবে বিপণনে যেতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। খুব শিগগিরই বাণিজ্যিক বিপণনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলায় বিজেএমসি-এর রিজার্ভ প্যাভিলয়ন ২এ-তে দায়িত্বরত ম্যানেজার (মার্কেটিং) মো. জাকির হোসাইন খান বলেন, পলিথিন যে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ করে সেটি বিবেচনায় রেখে পাটের পলিব্যাগ তৈরি হয়েছে। এ পলিব্যাগ দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।

তিনি আরো বলেন, রাজধানীর ডেমরায় লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে এ পলিব্যাগ তৈরি হচ্ছে। ব্যাগগুলো সাধারণ পলিব্যাগের চেয়ে টেকসই এবং বেশি ভার বহনে সক্ষম। তবে এখনো এটির বাণিজ্যিকভাবে বিপণনে যাওয়া হয়নি। বাজারে এ পলিব্যাগের দাম কত রাখা হবে সে বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করা হচ্ছে। সবকিছুই প্রায় চূড়ান্ত। আগামী দু-এক মাসের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু হবে।

Advertisement

বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, পলিথিনের বিকল্প পচনশীল পলিব্যাগ তৈরির প্রকল্প উদ্বোধন করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। পাট দিয়ে পলিব্যাগ তৈরির এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমদ। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বিজেএমসির তত্ত্বাবধানে পচনশীল পলিব্যাগ তৈরির প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত এ পলিব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও টেকসই। পাটের সূক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি হয়েছে। পাটের তৈরি পলিথিন মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। ব্যাগ দামে সাশ্রয়ী হবে। পাটের ব্যবহার বাড়ায় ন্যায্য দামও পাবেন কৃষক। অতীতের মতোই পাট দিয়ে বিশ্বে সুপরিচিত হবে বাংলাদেশ।

সূত্র জানায়, সরকারিভাবে উৎপাদনের পর বেসরকারিভাবেও এ ব্যাগ উৎপাদনে উৎসাহ দেয়া হবে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা হবে। বাজারে যে পলিথিন ব্যাগ আছে তার চেয়ে দেড়গুণ বেশি টেকসই এবং ব্যবহার স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যাবে এ পাটের পলিব্যাগে।

এক গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাংলাদেশের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিতভাবে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার। সস্তা ও বিকল্প না থাকায় সরকারি নানা উদ্যোগের পরও পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। এসব ব্যবহৃত পলিথিন সুয়ারেজের পাইপ, ড্রেন, নদী-নালা ইত্যাদিতে পানি প্রবাহের বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

Advertisement

পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরির উদ্দেশ্যে পাট থেকে সেলুলোজ আহরণ করা হয়। ওই সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে অন্য পরিবেশবান্ধব দ্রব্যাদির মাধ্যমে কম্পোজিট করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়। উৎপাদিত ব্যাগে ৫০ শতাংশের বেশির ভাগ সেলুলোজ বিদ্যমান। এছাড়া এতে অন্য কোনো প্রকার অপচনশীল দ্রব্য ব্যবহার হয় না বিধায় এটি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।

আবিষ্কৃত এ পলিব্যাগের ভার বহন ক্ষমতা পলিথিন ব্যাগের প্রায় দেড়গুণ বেশি এবং এটি পলিথিনের মতোই স্বচ্ছ হওয়ায় খাদ্যদ্রব্যাদি ও গার্মেন্টস শিল্পের প্যাকেজিং হিসেবে ব্যবহারের খুবই উপযোগী। এছাড়া দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করায় ব্যাগের দামও প্রচলিত পলিথিন ব্যাগের কাছাকাছি থাকবে বলে জানা গেছে।

এমইউএইচ/আরএস/এমআরএম/আইআই