ধর্ম

হজরত আলীর (রা.) ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত

হজরত আলীর (রা.) ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত

হজরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) ছিলেন নবিজির (সা.) চাচাতো ভাই, জামাতা ও সাহাবি। তিনি নবিজির (সা.) কাছে প্রতিপালিত হয়েছিলেন এবং তার সন্তানতুল্য ছিলেন।

Advertisement

ইসলামের আবির্ভাবের সময় তিনি ৮ থেকে ১১ বছর বয়সী বালক ছিলেন। একদিন তিনি নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরে ঢুকে দেখেন, নবিজি (সা.) ও উম্মুল মুুমিনীন খাদিজা (রা.) নামাজ আদায় করছেন। তিনি খুবই বিস্মিত হন। এ রকম কোনো ইবাদত বা প্রার্থনা তো তিনি আগে কখনও দেখেননি! নামাজ শেষে তিনি নবিজিকে (সা.) জিজ্ঞেস করেন, এটা কী ধরনের ইবাদত? নবিজি (সা.) তাকে ইসলামের বিষয়ে অবহিত করেন এবং বলেন, আমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই দ্বীন প্রচারের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই দ্বীন একমাত্র আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং অন্য সব মাবুদকে পরিত্যাগ করতে বলে।

কিশোরবয়সী আলী (রা.) বলেন, তিনি এই নতুন দ্বীনের ব্যাপারে বাবা আবু তালিবকে জানাবেন। কিন্তু নবীজি (সা.) তাকে এ বিষয় গোপন রাখতে বলেন। পরদিন সকালে আলী (রা.) নবিজির (সা.) কাছে এসে বলেন ইসলাম গ্রহণ করেন। আলী (রা.)-কে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম কিশোর হিসেবে গণ্য করা হয়।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হয়ে ওঠেন।

Advertisement

যে রাতে নবিজি (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পরিকল্পনা করেছিলেন, সে রাতে মক্কার মুশরিকরা নবিজির (সা.) বাড়ি ঘিরে রেখেছিল তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। নবিজি (সা.) হজরত আলীকে (রা.) নিজের বিছানায় রেখে মুশরিকদের চোখে ধুলো দিয়ে মক্কা ত্যাগ করেন। সকাল পর্যন্ত মুশরিকরা হজরত আলীকে (রা.) নবিজির (সা.) বিছানায় দেখে ভাবছিল নবিজি (সা.) শুয়ে আছেন। সকালে নবিজিকে (সা.) হত্যা করতে উদ্যত হয়ে মুশরিকরা বুঝতে পারে নবিজি (সা.) নন, হজরত আলীই (রা.) সারা রাত তার বিছানায় শুয়ে ছিলেন।

নবিজি (সা.) হিজরতের সময় আলীকে (রা.) দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি যেন নবিজির (সা.) কাছে গচ্ছিত মক্কার মানুষজনের আমানত তাদেরকে ফিরিয়ে দেন। আলী (রা.) নবীজির নির্দেশনা অনুযায়ী তিন দিন মক্কায় থেকে লোকদের আমানত ফিরিয়ে দেন।

এরপর তিনি নবিজির (সা.) পথ অনুসরণ করে হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচতে তিনি দিনে লুকিয়ে থাকতেন, রাতে পথ চলতেন। দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে সফর করার কারণে তার পা দুটো ফেটে যায়। বেশ কয়েক রাত সফর করে তিনি মদিনায় পৌঁছেন এবং নবিজি (সা.) যে ঘরে অবস্থান করছিলেন সেই ঘরেই ওঠেন।

নবিজি (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরকারী সাহাবি ও মদিনার স্থানীয় সাহাবিদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছিলেন অর্থাৎ প্রত্যেক মুহাজির সাহাবিকে কোনো আনসারি সাহাবির ভাই বানিয়ে দিয়েছিলেন যেন মদিনায় বসবাস করাসহ যাবতীয় ব্যাপারে তিনি তার সাহায্য পেতে পারেন। তখন নবিজি (সা.) আলীকে (রা.) মদিনার কোনো সাহাবির ভাই না বানিয়ে তাকে নিজের ভাই হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বলেন, তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার ভাই। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

Advertisement

মদিনায় হিজরতের পর মুসলমানদের বিভিন্ন যুদ্ধে আলী (রা.) অত্যন্ত বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বদরের যুদ্ধে তিনি মুসলমানদের পাতাকাবাহী ছিলেন। ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে তিনি নবিজিকে (সা.) রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। খন্দকের যুদ্ধে তিনি আরবের কিংবদন্তি যোদ্ধা আমর ইবনে আবদে ওয়াদকে পরাজিত করেন যাকে এক হাজার সৈন্যের সমতুল্য মনে করা হতো। খায়বারের যুদ্ধে ইহুদিদের সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গটি আলীর (রা.) নেতৃত্বে বিজিত হয়।

নবিজির (সা.) ওফাতের পর হজরত আবু বকর (রা.) ও ওমরের (রা.) খেলাফতকালে তিনি তাদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শক বা উপদেষ্টা ছিলেন। হজরত ওমর (রা.) শাহাদাতের সময় যাদেরকে পরবর্তী খলিফা নির্ধারণের দায়িত্ব দেন, তিনি তাদের অন্যতম ছিলেন। হজরত ওমরের (রা.) পর হজরত ওসমান (রা.) খলিফা হন। ওসমানের (রা.) শাহাদাতের পর হজরত আলী (রা.) মুসলমানদের খলিফা হন।

ওএফএফ/জিকেএস