বাংলাদেশের দুর্লভ পাখিদের মধ্যে অন্যতম মদনটাক। আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মদনটাক পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। সরকারিভাবে জায়গা করে নিয়েছে মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায়। কিন্তু এ মদনটাককে ঘিরে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। কারণ মদনটাকের ঘরে এসেছে চারটি নতুন অতিথি। নতুন অতিথিদের বিশেষ যত্নে লালন করছে তাদের মা-বাবা। নতুন অতিথিদের ঘিরে পার্কের দর্শনার্থীদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে।
Advertisement
সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিছুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠালগ্নে ৬টি মদনটাক পাখি সংগ্রহ করা হয়। এ থেকে গত নভেম্বর মাসে দু’টি ও চলতি মাসে দুটি বাচ্চা পাওয়া গেছে। আবদ্ধ পরিবেশে মদনটাকের বাচ্চা দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। বর্তমানের সাফারি পার্কে মদনটাকের সংখ্যা ১০টি।
তিনি বলেন, মদনটাক মূলত জলচর পাখি হিসেবে পরিচিত। মাছ, ব্যাঙ, সরীসৃপ, কাকড়া, বিভিন্ন জলজ প্রাণী এদের প্রধান খাদ্য। প্রজনন মৌসুম ব্যতীত একাকী নিভৃতচারী পাখি হিসেবে এরা পরিচিত। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে বড় গাছের মগডালে ডালপালা দিয়ে উঁচু গাছের শাখায় এরা ডিম পাড়ে। স্ত্রী জাতীয় মদনটাক তিন থেকে চারটি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ২৮ দিন পরেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
তিনি আরো বলেন, মদনটাকের মূল অস্তিত্ব দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের মাঝে মধ্যে দেখা যায়। ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর ও চীন থেকে এরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
Advertisement
সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী রক্ষক রিপন কান্তি পাল জানান, সাফারি পার্কে মদনটাকের খাবারেরর জন্য নলা ও পুঁটি মাছ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক ভাবে খাবার যোগানের জন্য তাদের আবাস্থলের পাশেই জলাধার তৈরি করে তাতে মাছ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাচ্চার খাবারের জন্য প্রতিদিনই ছোট ছোট মাছের যোগান দেয়া হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, মদনটাকের বাচ্চা দেয়া একটা খুশির সংবাদ। পাখিটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় মাঝে মধ্যে কিছু মদনটাক দেখা যায়। এদের খাবার, বসবাসের জায়গা নষ্ট হয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, ইকো সিস্টেম ও ফুড চেইনে কিছু সমস্যা হওয়ায় এদের অস্তিত্ব আজ বিপন্নের পথে। এদের বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে মদনটাকের অস্তিত্ব রক্ষা করা যাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব জানান, মদনটাক পাখি থেকে চারটি বাচ্চা পাওয়ায় তা আশার আলো দেখাচ্ছে। এভাবে বংশবৃদ্ধি ঘটলে মহাবিপন্নের তালিকা থেকে মদনটাক রক্ষা পাবে।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/এমএস
Advertisement