নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে পদত্যাগ করলেন বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। দেশের ইতিহাসে এ প্রথম কোনো প্রধান বিচারপতি অবসরের আগেই পদত্যাগ করলেন।
Advertisement
স্বাধীনতার পর ২১ জন বিচারক প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাই প্রথম পদত্যাগ করলেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সরকারি দলের তোপের মুখে পড়ে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর সেখানে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন তিনি। শনিবার বঙ্গভবন থেকে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ছিলেন দেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি। ৪৭ বছরের ইতিহাসে এস কে সিনহাই ছিলেন দেশের প্রথম অমুসলিম প্রধান বিচারপতি। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এস কে সিনহা। বয়স অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে বিচারিক ক্ষমতার কার্যকাল শেষ হওয়ার ৮১ দিন আগেই পদত্যাগ করলেন তিনি।
নানা কারণে আলোচিত ছিলেন বিচারপতি সিনহা। এক মাসের ছুটিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দাবি ছিল তাকে জোর করে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। এছাড়া রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির চেষ্টা হচ্ছে। তারা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থকও বটে।
Advertisement
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। অস্ট্রেলিয়া থেকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান গত ৬ নভেম্বর (সোমবার)। সেখান থেকে কানাডায় তার ছোট মেয়ে আশা সিনহার কাছে যান তিনি।
এস কে সিনহার পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমসহ দেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়। এর মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের বিষয়ে কিছু জানেন না বলেও মন্তব্য করেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এখনও এ সম্পর্কে কিছু জানি না। এজন্য মন্তব্যও করতে পারছি না। তবে, বিকেলে সিনহার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। এ সময় রাষ্ট্রপতির পরবর্তী করণীয় কী, প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব কার ওপর পড়বে এসব প্রশ্নেরও জবাব দেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বিলেন, সংবিধান মতে রাষ্ট্রপতি অন্য কোনো বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না দেয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাই এ দায়িত্ব পালন করবেন।
Advertisement
প্রধান বিচারপতি পদত্যাগের পর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে- জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি যদি অনুপস্থিত, অসুস্থ বা অন্য কোনো কারণে তার কার্যভার পালন করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দিতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নতুন কাউকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব না দিবেন ততক্ষণ পর্যন্ত মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা-ই প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি অলরেডি ( ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা) আছেন।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) মধ্যরাতে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের খবরে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন এসকে সিনহা।
উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর এক মাস ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি দেন প্রধান বিচারপতি। ওই ছুটির মেয়াদ ছিল ১ নভেম্বর পর্যন্ত। পরে তিনি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে থাকার ইচ্ছা পোষণ করে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপনও জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। গত ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। সেখানে তিনি বড় মেয়ে সূচনা সিনহার বাসায় ওঠেন। প্রধান বিচারপতি সিনহার এক মাসের ছুটি শেষ হয় শুক্রবার। তবে বিচারিক ক্ষমতার কার্যকাল শেষ হওয়ার ৮১ দিন আগেই পদত্যাগ করলেন তিনি
এফএইচ/এএইচ/আরআইপি