চাল ও গমের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী এবং এ দুটি পণ্যের আমদানিকারক ও মিলারদের (যারা আইন অনুযায়ী লাইসেন্স নেননি) আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে খাদ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। অন্যথায় ১৯৫৬ সালের কন্ট্রোল অব অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটির অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Advertisement
সোমবার সচিবালয়ে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের (ডিসি ফুড) সঙ্গে বৈঠকের পর খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইসেন্স না নিলে কন্ট্রোল অব অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটির অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের তিন বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার মুখে পড়তে হবে বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘১৯৫৬ সালের কন্ট্রোল অব অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটির অ্যাক্ট অনুযায়ী এক মেট্রিক টনের বেশি চাল ও গম ব্যবসায়ীদের খাদ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমাদের আরসি ফুড ও ডিসি ফুডরা অজ্ঞতার কারণেই হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক এতদিন এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন না। এই আইনটি তারা কার্যকর করেননি।’
Advertisement
মন্ত্রী বলেন, ‘এ আইন অনুযায়ী মিলারকে খাদ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। তেমনিভাবে আমদানিকারক, পাইকারি ব্যবসায়ী, আড়তদার, খুচরা ব্যবসায়ী- প্রত্যেককেই লাইসেন্স নিতে হবে খাদ্য অধিদফতর থেকে।’
বড় বড় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা অন্যান্য মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স নিয়ে থাকে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘খাদ্য অধিদফতরকে বেশিরভাগ সময় তারা ইগনোর (অবহেলা) করে। মনে করেন খাদ্য অধিদফতরের লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। কিন্তু কন্ট্রোল অব অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটির অ্যাক্ট অনুযায়ী অন্যান্য দফতরের লাইসেন্স থাকার পরও আমাদের দফতর থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।’
‘প্রত্যেককে (মিলার, পাইকারি, খুচরা ও অমদানিকারক) মজুদ করা চাল ও গমের পাক্ষিক হিসাব জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে দিতে হবে, এটা আইনে বলা আছে। কিন্তু তারা সেটা করেন না। মজুদের পাক্ষিক হিসাব না দিলে এই আইনে তিন বছরের জেলসহ জরিমানার বিধান আছে।’ -বলেন তিনি।
চাল ও গম ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নিতে হবে এবং পরিস্কার পাক্ষিক হিসাব দিতে হবে উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘যারা চিনি, গম ও আটার ব্যবসা করেন তারা কিন্তু চালের ব্যবসাও করেন। অনেকেই লাইসেন্স আছে, অনেকের নেই।’
Advertisement
মিলার, আড়তদাররা চালের দাম বাড়িয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বড় বড় ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ বিভিন্ন গোডাউনে ছিল, এখনও আছে। আমি তাদের নাম বলতে চাই না। এরাই বিভিন্ন সময়ে সিন্ডিকেট করে তেলের দাম চিনির দাম বাড়ায়। খবর পেয়েছি বিভিন্ন গোডাউনে তাদের এক লাখ, দুই লাখ, তিন লাখ বস্তা চাল মজুদ রয়েছে। আমাদের কাছ থেকে তারা লাইসেন্সও নিচ্ছে না।’
‘আইন অনুযায়ী, পাইকারি পর্যায়ে একজন ব্যবসায়ী ৩০০ মেট্রিক টন ধান ও চাল ৩০ দিন পর্যন্ত মজুদ রাখতে পারবেন। ৩০ দিনের মধ্যে এই মজুদ বিক্রি না হলে রিপোর্ট করে জানাতে হবে।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আরসি ফুড ও ডিসি ফুডদের আজকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত তারা নোটিশ করবেন ব্যবসায়ীদের। আইন অনুযায়ী আমাদের এখন থেকে লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। আমরা প্যানিক সৃষ্টি করতে চাই না। অক্টোবরের ৩০ তারিখের মধ্যে তাদের অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। না হয় আমরা জেলা প্রশাসক, মোবাইল কোর্ট ও আমাদের অফিসারদের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘অকাল বন্যার সুযোগ নিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল, ইনশাআল্লাহ আমরা সফলতার সাথে সেই সংকট মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। সংকট সৃষ্টিকারীরা ব্যর্থ হয়েছে। এই গোষ্ঠী যাতে আর কোনো দিন সংকট অবস্থা সৃষ্টি করতে না পারে, অপতৎপরতা না চালাতে পারে এ জন্য আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ নিয়েছি।’
চালের দাম নিম্নমুখী এবং দাম ক্রমান্বয়ে আরও কমবে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এক মাস পর আমন আসবে, কোনো সমস্যা আমাদের নেই। আমরা আমন সংগ্রহ করতে পারব। মজুদ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে আর কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি -জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে কাজ করছে। ইনশা আল্লাহ তাদের শনাক্ত করে তারা ব্যবস্থা নেবে।’
এ সময় খাদ্য সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বদরুল হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এআরএস/আরএস/জেআইএম/আইআই