সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যেখানে সবক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের কথা বলা হয় সেখানে নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করা অত্যন্ত দুঃখজনক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টতই বৈষম্যের বিষয়টি প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেলে ভর্তির জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। সেখানে এক জায়গায় বলা হয় ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস বা বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় পূর্ববর্তী বছরের এইচএসসি উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের সর্বমোট নম্বর থেকে ৫ নম্বর কর্তন করে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এক্ষেত্রে বৃহত্তর স্বার্থের বিষয়টিই মাথায় রাখতে হবে।
Advertisement
২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে প্রথম বর্ষে ভর্তির আবেদন আহ্বান করে গত ২১ আগস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিজ্ঞপ্তির ৬ নম্বর প্যারায় বলা হয়, ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস বা বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় পূর্ববর্তী বছরের এইচএসসি উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের সর্বমোট নম্বর থেকে ৫ নম্বর কর্তন করে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ২৭ আগস্ট রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
এই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের অবকাশকালীন একটি দ্বৈত বেঞ্চ পাঁচ নম্বর কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। সিদ্ধান্তটি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দেন আদালত। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত বুধবার অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে। আবেদনটি গত বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য ওঠে। এদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন চেম্বার বিচারপতি। একই সঙ্গে আগামী ৩ অক্টোবর আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি। স্থগিতের ফলে ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর থেকে ৫ নম্বর কাটা যাবে।
আদালতের বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলছে, ৫ নম্বর কাটা গেলে তারা বৈষম্যের শিকার হবে। ফলে ভাল পরীক্ষা দিয়েও তারা পিছিয়ে থাকবে। এবং ভর্তির সুযোগ নাও মিলতে পারে। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষায় যেখানে সামান্য নম্বরের ব্যবধানে ফলাফল নির্ধারিত হয় সেখানে ৫ নম্বর আগে থেকেই কাটা গেলে সংশ্লিষ্টরা যে পিছিয়ে পড়বে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া সিন্ধান্তটি এসেছে হঠাৎ করে। আগে থেকেই জানানো হলে এ বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতি থাকতো তাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও দ্বিতীয়বার সুযোগ পান না ভর্তিচ্ছুরা। এ নিয়ে নানা মত রয়েছে। আমাদের দেশে মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপক চাপ। অনেকেরই স্বপ্ন থাকে তাদের পছন্দানুযায়ী প্রতিষ্ঠানে পড়ার। সেখানে কোনো নিয়মের কারণে কেউ যেন বঞ্চিত বা বৈষম্যের শিকার না হন সেটি নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ৫ নম্বর কাটা নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধানই কাম্য।
Advertisement
এইচআর/এমএস