জাতীয়

গুলি আর জবাই করে রোহিঙ্গাদের মারছে সেনারা

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আর ‘মারমা’ বা ‘মগ’ জনগোষ্ঠী মিলে রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে। প্রথমে গ্রামগুলো ঘিরে ফেলা হচ্ছে। এরপর সেনারা নির্বিচারে গুলি করছে। গুলির পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে জবাই করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের।

Advertisement

গত ২৫ আগস্ট থেকে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে এভাবে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় দুর্ভাগা রোহিঙ্গাদের লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে বলেও অভিযোগ করেন প্রাণ নিয়ে ফিরে আসা রোহিঙ্গা আরিফুর রহমান।

আরিফুর রহমান আরাকান রাজ্যের তুমব্রু রাইট গ্রামে বসবাস করতেন। ব্যবসা করে বাড়ি-গাড়ি সবই করেছিলেন। মিয়ানমার সেনারা গত ৬ জুলাই তুমব্রু গ্রাম জ্বালিয়ে দিলে আরিফের বাড়িও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তার প্রাইভেট কারটিও জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

রোহিঙ্গা আরিফুর রহমান

Advertisement

এই ব্যবসায়ী রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করে আসছিলেন। দোভাষী হিসেবেও কাজ করেছেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। নির্যাতন-নিপীড়নের সব খবরই রাখছেন দীর্ঘদিন ধরে। এখন প্রাণ ভয়ে সীমনা পেরিয়ে এপারে এসে শরণার্থীদের জন্য নির্মিত তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন। পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে ঈদুল আজহার পর সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।

জাগো নিউজকে আরিফুর রহমান বলেন, আরাকান রাজ্যে মোট পাঁচ উপজেলা। সব উপজেলায় মুসলিম রোহিঙ্গাদের বসতি থাকলেও মন্ড, কুসিডং ও রাসিডং উপজেলায় মুসলিম জনসংখ্যা বেশি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমরা প্রতিটি নির্বাচনে ভোট দিয়ে আসছি। কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে সরকার আমাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আখ্যা দিয়ে সব অধিকার হরণ করে নেয়।

‘মগ’র এক ধর্মীয় নেতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য দেয়ার পর থেকে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। ওই ধর্মীয় নেতা সেনাবাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে নিরীহ মুসলমানদের ওপর সন্ত্রাসী কার্যক্রম উস্কে দিচ্ছে। আগেও সংঘর্ষ হয়েছে কিন্তু এমন নির্মমতা কখনও হয়নি। আগে সেনারাই এসে আমাদের রক্ষা করত। এখন সেনারাই গুলি করছে, হত্যা করছে।

আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা বসতি

Advertisement

‘২৫ আগস্টের পর সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আরও দুই লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হওয়ার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করছে। তিন উপজেলার বাকি ১২ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানের কী অবস্থায়- তা কেউ জানে না। যারা পালিয়ে আসছেন, তারা বলছেন, গ্রামগুলোতে শুধুই রোহিঙ্গাদের লাশের গন্ধ।

তিনি মিয়ানমারের বিভিন্ন পয়েন্টে আটকা পড়া রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে বিশ্ববাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে হাজারও রোহিঙ্গা

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাক্যাম্পে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরএসএ)। ওই হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্যসহ ৮৯ জন মারা যান বলে মিয়ানমার সরকারের ভাষ্য। এরপরই রাজ্যটিতে শুরু হয় সেনা অভিযান।

জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেনা অভিযানে এক হাজারের অধিক নিরীহ রোহিঙ্গা মারা গেছেন। আর প্রাণ বাঁচাতে সর্বস্ব হারিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

এএসএস/এমএআর/জেআইএম