ক্রমাগত বৃষ্টি আর পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে বেড়েই চলেছে নদীর পানি। বিপদসীমার উপরে উঠে ভাসাতে শুরু করেছে তীরবর্তী এলাকার লাখ লাখ মানুষকে। মাত্র একমাসের ব্যাবধানে ফের বন্যা কবলিত হওয়ায় কষ্টের যেন শেষ নেই উত্তরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের। ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তা কিংবা বাঁধে অবস্থান করছে অসংখ্য পরিবার। আঞ্চলিক পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে আগামী কয়েকদিনে পানি আরো বাড়তে পারে।
Advertisement
লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, সিংঙ্গীমারী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রেললাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট।
রোববার সকালে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সব (৪৪টি) গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তিস্তা ব্যারেজ রক্ষার বাইপাস সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
Advertisement
কুড়িগ্রাম
একইভাবে ধলাই ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়াই ঢাকার সঙ্গে কুড়িগ্রামের সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রোববার সকালে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ও চিলমারি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বেড়ে কুড়িগ্রামের ৫০টি ইউনিয়নের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ৪১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, নাগেশ^রী, ভূরুঙ্গামারী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুরের চরাঞ্চলের বেশ কিছু ঘরবাড়িতে দ্বিতীয় দফা পানি ঢুকেছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদরের যাত্রাপুর, আঠারঘড়িয়া, বারোঘড়িয়া, হেমেরকুঠি, জগমোহনের চর, চর জয়কুমরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ধরলার ভাঙনে বাংটুর ঘাট, হেমেরকুঠি, সারোডোব এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে।
গাইবান্ধা
Advertisement
ব্রহ্মপুত্র নদের পানি রোববার সকাল ৬টায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদ-নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে কয়েকদিন থেকে গাইবান্ধার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। আগামী কয়েকদিনেও নদ-নদীগুলোতে ব্যাপক পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
রোববার সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপরে, ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার উপরে, করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে ৫০ সেন্টিমিটার নিচে ও তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের ফুলছড়ি পয়েন্টের রেকর্ড কিপার (পানি পরিমাপক) মো. আজিজার রহমান মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, সকাল ছয়টায় ফুলছড়ি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়।
সিরাজগঞ্জ
অপরদিকে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। এতে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, গুমানী, হুরাসাগর, ফুলজোড় নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন করে আবারও বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের ডাটা এ্যান্ট্রি অপারেটর আবুল কালাম আজাদ জানান, শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় (সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্ট এলাকায়) যমুনা নদীর পানি ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, ভারতের আসামে বন্যা হওয়ার কারণে যমুনার পানি আরো ৪/৫ দিন বাড়বে। এতে দ্বিতীয় দফায় সিরাজগঞ্জে আবারো বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এবং যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওয়ের টঙ্গন, সেনুয়া ও শুক নদীসহ আঞ্চলিক নদীগুলোতে রোববার সকাল থেকে পানি বিপদসীমার ৪০ মিলিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির এ অব্যাহত বৃদ্ধিতে জেলার প্রায় ১ হাজার গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
জামালপুর
জামালপুরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে আজ রোববার সকাল থেকে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার উলিয়া, পার্থশী, চিনাডুলী, কুলকান্দি, সাপধরী, চুকাইবাড়ি, নোয়ারপাড়া, দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ, চিকাজানী এবং মেলান্দহের মাহমুদপুর ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১১টি বিদ্যালয়।
এফএ/এমএস