টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় ভাতিজিকে প্রায় সাত মাস আটকে রেখে কথিত চাচার ধর্ষণ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার প্রকাশ পেল সৎবাবার হাতে দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক তরুণী।
Advertisement
ঘটনাটি ঘটেছে ঘাটাইল উপজেলার মালিরচালা (বাগামারি পাড়া) গ্রামে। এ ঘটনায় ওই তরুণী ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।
বিষয়টি জানাজানির একপর্যায়ে ওই তরুণী (১৮) বাদী হয়ে সৎবাবা কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানা কালাইপাড় গ্রামের আমির হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় বানেছা বানুর। ওই ঘরে এক কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। ওই কন্যার বয়স ৩-৪ হতে না হতেই বিচ্ছেদ ঘটে তার বাবা-মায়ের।
Advertisement
ফলে মায়ের সঙ্গেই শিশুকন্যা চলে যায় তার নানার বাড়ি সাগরদীঘি এলাকার মালিরচালা গ্রামে। ওই বাড়িতেই ছিল একই গ্রামের বাসিন্দা লম্পট কামরুল ইসলামের যাতায়াত।
স্বামীর অবর্তমানে মা বানেছা বানুর সঙ্গে লম্পট কামরুলের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সুযোগে কামরুল বানেছা বানুকে বউ করে ঘরে নেয়ার প্রস্তাব দেয়। বানেছা বানু প্রস্তাব গ্রহণ করেন ও তার শিশু কন্যার দায়িত্ব গ্রহণের শর্তে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর বানেছা বানু জানতে পারেন তার লম্পট স্বামী কামরুল এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছিলেন। তার নির্যাতনে এক বউ ইতোপূর্বে মারা গেছেন। এ সত্ত্বেও দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার গড়ার চেষ্টা করেন বানেছা বানু। বিয়ের পর প্রথম কয়েক বছর ভালোই চলছিল তাদের সংসার।
কিছুদিন পর উন্মোচিত হয় স্বামী কামরুলের আসল রূপ। সেই সঙ্গে মেয়ের প্রতি লম্পট স্বামী কামরুলের কুদৃষ্টি লক্ষ্য করেন বানেছা বানু। এ নিয়ে লম্পট কামরুলকে সতর্কও করে দেন তিনি।
Advertisement
ফলে বানেছা বানুর ওপর বেড়ে যায় লম্পট স্বামীর পাশবিক নির্যাতন। স্বামীর পাশাপাশি ননদ, শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই নির্যাতন চালায় তার ওপর।
এমতবস্থায় মেয়ে একদিন মা বানেছা বানুকে দেখতে যায়। তখন তার সৎ বাবা লম্পট কামরুলের কুদৃষ্টি পড়ে মেয়ের ওপর।
এ প্রসঙ্গে নির্যাতিত তরুণী বলেন, ঘটনার রাত চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি। বাড়ির সবাই ঘুমন্ত। রাত আনুমানিক দেড়টা। ওদিন সৎ বাবা আমাকে ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি কাউকে জানালে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর থেকে লম্পট কামরুল ভয়ভীতি দেখিয়ে আরও কয়েকবার আমাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় বাদী হয়ে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি। মামলা তুলে নেয়ার জন্য এখন লম্পট কামরুল হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত কামরুল পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাগরদীঘি তদন্ত কেন্দ্রের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কবির হোসেন জানান, ধর্ষণ ঘটনায় ঘাটাইল থানায় একটি মামলা হয়েছে। ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সোমবার টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত কামরুলকে গ্রেফতার করতে কয়েক দফায় বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। কামরুল পলাতক থাকায় তাকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
আরিফ উর রহমান টগর/এএম/এমএস