ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা ‘হিংস্র, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যার মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে এমনটি বলেছেন আদালত।
Advertisement
রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস এবং বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর দ্বৈত বেঞ্চ দীর্ঘ রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির নামে এসব বর্বর হামলার তীব্র সমালোচনা করেন।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, রাজনৈতিক হাঙ্গামার নামে একজন নিরস্ত্র এবং নিরীহ ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি রাজনৈতিক নেতাদের জন্য অশনি সংকেত বলে উল্লেখ করেছেন।
কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করে রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট আরও বলেন, ছাত্র রাজনীতি তার গৌরব ধরে রাখতে পারছে না। অস্ত্র এবং মাদক বর্তমান ছাত্র রাজনীতিতে এখন প্রকাশ্য বিষয়। ফলে ছাত্র রাজনীতির নামে তারা চাঁদাবাজি, হত্যা, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ছাত্র রাজনীতিতে মাদক এবং অস্ত্র বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এতে কোনো কোনো সময় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা হিংস্র, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।
Advertisement
রায়ে বলা হয়,কিছু রাজনৈতিক নেতা এ ব্যাপারে প্রণোদনাও দিয়ে থাকে। তারা মনে করে এতে তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি আরও সমৃদ্ধ হবে। এমন একটা সিস্টেম দাঁড়িয়ে গেছে যে, মিছিলে লোক বাড়ানোর জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয়।
অনেক সময় আবাসিক শিক্ষার্থীরা হলের সিট ধরে রাখতে মিছিলে বা কর্মসূচিতে আসতে বাধ্য হয়। যদি সাধারণ শিক্ষার্থীরা দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করে তবে তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এরকম ঘটনাও দেখা গেছে যে, পরীক্ষার হলে নকল করতে না দেয়ায় দায়িত্বরত শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। এটি ছাত্র রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। কারণ তারাই ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিবে।
আদালত বলেন, বিশ্বজিৎ কোনো রাজনৈতিক দল করতো না। সে ছিল নিরস্ত্র এবং নিরীহ। এই হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত না হলেও হামলাকারীদের উন্মুক্ত আক্রমণেই বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছে। সাক্ষ্য এবং ভিডিও চিত্রে বিশ্বজিতের শরীরে একাধিক আঘাতের উল্লেখ থাকলেও মামলার সুরতহাল, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে একটি মাত্র আঘাতের কথা এসেছে। তবে প্রতিবেদন দু’টিতে আঘাতের স্থান নিয়ে গড়মিল রয়েছে।
বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে থেকে রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল ও রাজন তালুকদারকে বিচারিক আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে হাইকোর্ট। আর যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত চারজন হলেন- মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, জিএম রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, নূরে আলম ওরফে লিমন, ইমদাদুল হক এমদাদ।
Advertisement
খালাসপ্রাপ্ত চারজন হলেন-মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে থেকে দুইজন কাইয়ুম মিয়া ও সাইফুল ইসলাম। যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের মধ্যে থেকে গোলাম মোস্তফা ও এএইচএম কিবরিয়াকে খালাস দিয়েছেন।
বেলা পৌনে ১১টা থেকে শুরু হয় রায় পড়া। মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পযন্ত দীর্ঘ রায় পাঠ করেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ সদস্য বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস। এর আগে গত ১৭ জুলাই শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৬ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেন আদালত। গত ১৬ মে থেকে বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথরেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাবিনা ইয়াসমিন মলি। আসামিদের পক্ষে আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট শাহ আলম ও মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সবুজ শুনানি করেন।
এফএইচ/জেএইচ/জেআইএম