মতামত

নির্বাচন কমিশনের পথনকশা

গত রোববার নির্বাচন কমিশনের ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কর্মপরিকল্পনা’ প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। এই পথনকশা নিয়ে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হবে। এরপর তা চূড়ান্ত করা হবে। এই পথনকশার মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী এবং দেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করা। সেদিক থেকে কমিশনের এই উদ্যোগ ইতিবাচক। সকলের অংশগ্রহণে পথনকশাটি এমনভাবে চূড়ান্ত এবং বাস্তবায়ন করা হোক যাতে নির্বাচন ব্যবস্থার অগ্রগতিতে তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

Advertisement

রোববার ঘোষিত এই পথনকশায় সাতটি কাজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার চলতি জুলাই থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করা হবে; নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে পরামর্শ ৩১ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ জুলাই থেকে ডিসেম্বর, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ জুলাই থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত, বিধি অনুসারে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কাজ ২০১৮ সালের জুন থেকে তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এ বছরের অক্টোবর থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ভোট গ্রহণের এক সপ্তাহ আগে শেষ করা হবে। তবে এই কর্মপরিকল্পনা না থাকা বিষয় নিয়েও অংশীজনেরা সংলাপে মতামত দিতে পারবেন। সিইসি বলেছেন, এ কর্মপরিকল্পনা নির্বাচনের পথে কাজ শুরুর একটি সূচনা দলিল। এ কর্মপরিকল্পনাই সব নয়। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে এটি আরও বাস্তবায়নযোগ্য করে তোলা হবে। পথনকশা অনুযায়ী সুশীল সমাজের সঙ্গে ৩১ জুলাই, গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আগস্টে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক, নারীনেত্রী ও নির্বাচন পরিচালনাকারী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অক্টোবর মাসে পৃথক দিনে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপে পাওয়া সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করা হবে ডিসেম্বরে।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পর নির্বাচন কমিশনের গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশনের ব্যাপক দায়িত্ব। আমাদের দেশে রাজনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা। এজন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়াটা নির্বাচন কমিশনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বও। এই দায়িত্বে সামান্যতম কোনো অবহেলা বা বিচ্যুতির সুযোগ নেই। আগামী জাতীয় নির্বাচন এই কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। কাজেই কমিশনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে হবে। সবার জন্য সমতল ক্ষেত্র সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে কমিশন বিশ্বাসযোগ্যতার পথে এগিয়ে যেতে পারে। কমিশন যে পথনকশা ঘোষণা করেছে তাতে অংশীজনরা তাদের ভূমিকা রাখবেন এমনটি আশা করা যায়। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন কিন্তু কমিশনের একক চেষ্টায় হবে না। এতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

এইচআর/জেআইএম

Advertisement