নড়াইলের বেশিরভাগ সড়ক-মহাসড়ক ভেঙে খানা-খন্দকে পরিণত হয়েছে। শুধু পিস নয়, অনেক সড়কে পাথর, খোয়া ও বালি পর্যন্ত উঠে গেছে। এসব ভাঙাচেরা সড়কে বর্ষার পানি জমে একেবারে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে একদিন বৃষ্টি হলেই প্রায় এক সপ্তাহ পানি জমে থাকে।
Advertisement
এ কারণে সড়কগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়া বেশির ভাগ সড়কের পাশে প্রয়োজনীয় জায়গা এবং মাটি না থাকায় দুর্ঘটনার শংকা বেড়ে গেছে।
এ জেলার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থায় ঈদে ঘরমুখো মানুষের চরম দুর্ভোগে পড়ার নিশ্চিত আশংকার কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালকসহ ভুক্তভোগীরা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলে সওজ বিভাগের অধীনে ১৭০ দশমিক এক কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (এলজিআই) আওতায় দুই হাজার ৯৫২ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে এলজিইডির ৪৫২ কিলোমিটার এবং এলজিআইর দুই হাজার ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এলজিআই হচ্ছে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ। সেক্ষেত্রে এলজিআইয়ের রাস্তাগুলোর অবস্থা সবচেয়ে করুণ।
Advertisement
আমাদা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আল ফয়সাল খান জানান, নাড়ির টানে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর থেকে লোকজন গ্রামের বাড়ি নড়াইলে আসতে শুরু করেছেন। দু’তিন দিনের মধ্যে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। এক্ষেত্রে গ্রামীণ রাস্তাগুলো বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ রাস্তায় পিস ও খোয়া উঠে চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ছোট-বড় গর্তে পানি জমে আছে। ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।
গোবরা মিত্র মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন জানান, নড়াইল-গোবরা-ফুলতলা সড়কের অবস্থা খুবই করুণ। এই সড়কের বীড়গ্রাম বটতলা, গোবরা কলেজ ও বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ভেঙেচুরে খান খান হয়ে গেছে। প্রায় চার বছর ধরে এ অবস্থা বিরাজমান। একদিন বৃষ্টি হলে এই সড়কের ভাঙাচেরা অংশে সপ্তাহখানেক পানি জমে থাকে।
কলেজের ছাত্রী ফারহানা বলেন, রাস্তার এ সমস্যা দীর্ঘদিনের কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। যাতায়াতে খুব কষ্ট পোহাতে হয়। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে সড়কের এই ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়।
রূপগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী খোকন দেবনাথ বলেন, নড়াইল-লোহাগড়া-কালনা-ভাটিয়াপাড়া-যশোর জাতীয় মহাসড়কটি মাঝে-মধ্যে একটু-আধটু সংস্কার করলেও বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে পিস উঠে গর্তের সৃষ্টিতে হয়েছে। সড়কটির দুই পাশে নিচু থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহন চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়ে। পানি আর কাঁদায় একাকার হয়ে যায়। এ সড়কের অধিকাংশ জায়গায় ভেঙেচুরে যেমন চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে তেমনি অবৈধ দখলে আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
Advertisement
নড়াইল-যশোর সড়কের বাসচালক মকতুল হোসেন বলেন, এ সড়কে চরম ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীসাধারণ যাতায়াত করছেন। এছাড়া নড়াইল-মাগুরা-মাইজপাড়া সড়কের প্রবেশমুখে এলজিইডি ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মাঝামাঝি সড়কের ওপর দীর্ঘদিন ধরে ইট ও বালি কে বা কারা ফেলে রেখেছেন। তবুও প্রতিবন্ধকতা অপসারণে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এদিকে জেলা শহরের রূপগঞ্জ মুচিপোল সংযোগ সড়ক এলাকা থেকে ভওয়াখালী যাওয়ার রাস্তাটি দীর্ঘ নয় মাস পানিতে ডুবে আছে বলে জানিয়েছেন ওই সড়কের বসবাসরত শফিকুল ইসলাম নান্নু। সামান্য বৃষ্টি হলেই নড়াইল পুরাতন বাসটার্মিনাল এলাকায় পানি জমে যাচ্ছে। এতে শহরবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) জেলা সভাপতি সৈয়দ খায়রুল আলম জানান, নড়াইল-কালনা মহাসড়কের গা ঘেঁষে পাঁচটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এছাড়া লোহাগড়ার এড়েন্দা-আমাদা-লুটিয়া সড়কে দু’টি এবং নড়াইল-কালিয়া সড়কের আউড়িয়ায় একটি ইটভাটা সড়কের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। এসব ভাটার মাটি পাহাড়ের মতো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বৃষ্টিতে ভাটার কাঁদামাটি সড়ক-মহাসড়কের ওপর পড়ে চলাচল অনুপোযোগী হয়ে গেছে।
নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ খান বলেন, নড়াইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১৭০ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তার মধ্যে ৭৫ ভাগ সড়কের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। একেবারেই চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাশ দাবি করে বলেন, জেলার সড়ক-মহাসড়কগুলোর অবস্থা ভালো। তেমন কোনো সমস্যা নেই।
এ ব্যাপারে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবু ছায়েদ বলেন, বরাদ্দ পেলে পর্যায়ক্রমে সড়কগুলো সংস্কার করা হবে।
হাফিজুল নিলু/এফএ/পিআর