আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Advertisement
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে চলতি বাজেটের তুলনায় ভর্তুকিতে বরাদ্দ কমছে ৫০০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থবিভাগের তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকিতে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের যে প্রস্তাব আছে তা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ।
পাঁচ বছর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভর্তুকিতে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ওই বছর পুরো অর্থই খরচ হয়েছে; যা ওই অর্থবছরের জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ ছিল।
Advertisement
এরপর থেকেই ভর্তুকি কমতে শুরু করে। সে হিসেবে পাঁচ বছরে বাজেট ভর্তুকি কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় বাজেটে বরাদ্দের বড় একটি অংশ ব্যয় হতো ভর্তুকিতে। সরকারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ ছিল ভর্তুকি। এখন সেই দুশ্চিন্তা কমেছে।
কারণ, ভর্তুকির চাপ ক্রমান্বয়ে কমছে। এ প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ভালো মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ, ভর্তুকি ব্যয় বেশি হলে আর্থিক চাপে থাকে সরকার। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য নিম্নমুখী ও জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় এ খাতে আগের চেয়ে বরাদ্দ কমেছে। ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে সরকার।
সূত্র জানায়, চলতি ২০১৬-১৭ সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৭-১৮ বাজেটে ভর্তুকি খাতে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাখা হলেও সংশোধনের সময় তা ২০ হাজার কোটিতে নেমে আসবে।
Advertisement
অর্থবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মধ্যে ভর্তুকি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। ২০২১ সালের পর শুধু কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়া হতে পারে। সেটাও আবার সরাসরি অর্থ না দিয়ে কৃষকদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে কৃষি সরঞ্জাম সরবরাহ করার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বর্তমানে ছয় থেকে সাতটি খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, কৃষি, রফতানি, খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে আরও কিছু খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। তবে এসব খাতে বরাদ্দ খুব কম থাকে। আগে জ্বালানি তেলে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হতো। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় গত অর্থবছর থেকে জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করা হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বাজেটের মতো আগামী বাজেটেও এ খাতে ‘শূন্য’ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষিতে মূলত সার আমদানিতে ভর্তুকি দেয়া হয়। আগামী বাজেটে এ খাতে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মূল বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ৩ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
বিদ্যুতে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এ খাতে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য বরাদ্দের বেশি অর্থ দেয়া হবে।
দরিদ্র জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাওয়ানোর জন্য খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি করে সরকার। এ জন্য চাল-আটাতে ভর্তুকি দেয়া হয়। আগামী বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আগের চেয়ে এক হাজার কোটি বাড়িয়ে চার হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
রফতানি উৎসাহিত করতে ৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও সমপরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। মূলত তৈরি পোশাক পণ্য রফতানিতে এ সহায়তা দেয়া হয়।
পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে আগের মতো ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে দেড় হাজার কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে আসন্ন বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি ব্যয়ের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ সময়ে ভর্তুকিতে বরাদ্দ কমেছে শতকরা ৩৫ ভাগ; যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যৌক্তিক খাতে ভর্তুকি থাকতে হবে। তবে ভর্তুকি বরাদ্দের অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে সহায়তা দিতে এবং কৃষকদের সহায়তায় ভর্তুকি রাখা খুবই যৌক্তিক বলে তিনি মনে করেন।
এমইউএইচ/এনএফ/জেআইএম