শিক্ষা

একাদশে ভর্তিতে জালিয়াতির খপ্পরে শিক্ষার্থীরা

নিজ কলেজে ভর্তি করতে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ফলে বিপাকে পড়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। উপায় না পেয়ে প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট কলেজের নোটিশ বোর্ডে ভিড় করছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। সোমবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Advertisement

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজ শাখার চারপাশে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ভিড়। দূর-দূরান্ত থেকে ভুক্তভোগীরা নানা অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছেন। তৃতীয় তলায় বিষণ্ন মনে অপেক্ষারত সাবরিনা (অভিভাবক) বলেন, আমার ছোট বোন সিমলা, কিশোরগঞ্জের ‘হোসেনপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ থেকে এসএসসি পাস করেছে। সে একাদশে ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে দেখে তার আবেদন হয়ে গেছে। ১০টি কলেজ পছন্দ করার সুযোগ থাকলেও শুধু তার প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়েছে।

কারা আবেদন করেছে তা জানেন না অভিযোগ করে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমার কলেজ থেকে নম্বরপত্র দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষকরা বলছেন, এ স্কুল থেকে পাস করেছ এখন এই কলেজেই ভর্তি হতে হবে। নতুবা আর কোথাও ভর্তি হতে পারবা না। কিন্তু তিনি সেই কলেজে ভর্তি হতে চান না বলে অভিযোগ নিয়ে বোর্ডে এসেছেন। এই স্কুল থেকে পাস করা আরও ৩০ জন শিক্ষার্থীর একই অবস্থা বলে তিনি জানান।

ঢাকা বোর্ডে আসা ভর্তিচ্ছু সামিরা আক্তার মিতু ও তানিয়া আক্তারসহ ১০ জন সহপাঠী এসেছেন অভিযোগ নিয়ে। তারা জানান, তাদের না জানিয়ে স্যাররা আগের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করেছেন। তারা আবেদন করতে গিয়ে দেখেন একটি কলেজকে পছন্দ দেখিয়ে আবেদন করা হয়েছে। এটি দেখে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাই সকাল থেকেই অভিযোগ নিয়ে বোর্ডে এসে তারা অপেক্ষায় আছেন।

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিভাবক ও ছাত্রী জানান, আবেদন করতে পাশের কম্পিউটার দোকানে গেলে তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি বা তার মেয়ে আবেদন না করলেও তার পক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তির আবেদন করা হয়েছে। ওই কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করলে তিনি তার কলেজে ভর্তি হতে চাপ দেন।

ভর্তি না হলে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পাসের মার্কশিটসহ অন্যান্য কাগজপত্র দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন। একইভাবে ওই কলেজে ২০ জন শিক্ষার্থীকে জোর করে আবেদন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইভাবে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার জনতা কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।

তারা শিক্ষার্থীদের রোল, রেজিস্ট্রেশন সংগ্রহ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই আবেদন করেছে। এমন অসংখ্য শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করতে গেলে এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

সব অভিযোগ স্বীকার করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন বলেন, আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন অভিযোগ পাচ্ছি। অভিযোগ এলে যাচাই-বাছাই করে তা বাতিল করে নতুনভাবে আবেদন করে দেয়া হচ্ছে। তবে মোবাইল নম্বরসহ আবেদনে নানা ভুলের অভিযোগ তুলনামূলক বেশি।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম চালু হওয়ায় অনেক কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না, এই আশঙ্কা থেকেই জোর করে শিক্ষার্থীদের আবেদন করানো হচ্ছে। এ ধরনের অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। কোনো শিক্ষার্থী আবেদন বাতিল করতে চাইলে তাকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের কলেজ শাখায় আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে যোগাযোগ করতে হবে। যারা আবেদন করতে গিয়ে ভুল নম্বরে টাকা পাঠিয়েছে, তাদের পুনরায় ফি দিতে হবে না। আমরা এ ভুলগুলো সংশোধনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। সবাই ভর্তির সুযোগ পাবে।

কেউ কলেজের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ করছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ এমন করে থাকলে তা অন্যায় হিসেবে গণ্য হবে। কারও বিরুদ্ধে কোনো জালিয়াতির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামী ২৬ মে ভর্তির আবেদনের সময় শেষ হলেও ২৭, ২৮ ও ২৯ মে বৃদ্ধি করা হবে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, গত ৯ মে একাদশে ভর্তি আবেদন শুরু হয়। আগামী ২৬ মে পর্যন্ত এ কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এবার ৮টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডসহ মোট ১০ বোর্ডের অধীনে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন পাস করেছে। আর জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন।

এমএইচএম/এমআরএম/ওআর/বিএ