তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বিরাজমান ‘অনৈক্য’ দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তৃণমূল নেতাদের মাঝে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে বিরোধপূর্ণ জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্যদের ঢাকায় ডেকে কথা বলছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
Advertisement
দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়ন করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারায় সেখানে দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃণমূল নেতাদের অনৈক্যই দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের মূল কারণ।
দলটির নেতারা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান মূল্যায়নে সহায়ক হয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দ্বন্দ্ব-কোন্দল মেটানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রতিনিধিসভা, কর্মীসভাসহ বিভিন্নভাবে আলোচনা করে সাংগঠনিক দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা চলছে। দলের সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি সমন্বয় করছেন।
Advertisement
গত ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ প্রসঙ্গে আলোচনা উঠলে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
পরদিন আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তৃণমূলের অনৈক্য মেটাতে কেস-টু-কেস কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দলের নির্বাহী কমিটির সভায়।
ওই সভার পর থেকে বিরোধপূর্ণ জেলার নেতাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিভাগের এক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের জেলায় আওয়ামী লীগ করেন না কিন্তু সরকারের কোনো এক মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ার সুবাদে রাজনীতিতে তিনি প্রভাব বিস্তার করছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দলের সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছেন। আশা করছি শিগগিরই এর সুফল আমরা পাব।
Advertisement
এদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের বিরোধপূর্ণ জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২০ মে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় যোগ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কোন্দল মিটিয়ে দলের ঐক্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করে ওবায়দুল কাদের ওই সভায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ হলে আমাদের রক্ষা করার আর কেউ থাকবে না। ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাইরের শক্তিকে আমরা মোকাবেলা করতে পারব। আপন ঘরে যদি শত্রু থাকে তার আর বাইরের শত্রুর দরকার নেই।’
ওই সভায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দলের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘দল ক্ষমতায় না থাকলে টাকা-পয়সা নিয়ে পালাতে হবে। তা কি ভাবেন না? দল যদি ক্ষমতায় না থাকে, এখন যে টাকা-পয়সা রোজগার করছেন, তখন এ টাকা নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হবে। এটা ভাবতে হবে।’
এইউএ/এমএআর/আরআইপি