‘অল্প কিছুদিনের মধ্যে বিনা বিচারে কেউ কারাগারে আটক থাকবে না’ বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
Advertisement
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। তাই বিচার কাজে আরও গতি এসেছে। এরপরও যদি বিচারকদের কোনো সমস্যা থাকে তা পাবলিকলি (জনসম্মুখে) না বলে সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে তা সমাধানের আহ্বান জানান তিনি।
আগামী ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি অত্যন্ত সবিনয় এবং প্রধান বিচারপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, আপনারা অনেক উন্নয়নশীল দেশ দেখেছেন, অনেক উন্নত দেশ দেখেছেন। আপনারা আমাদের প্রতিবেশী দেশও দেখেছেন। কোনো দেশে কিন্তু বিচারকার্য ছাড়া মাননীয় প্রধান বিচারপতিরা এত উষ্মা, এত কথা পাবলিকলি (জনসম্মুখে) বলেন না।’
Advertisement
‘আমার কথা হচ্ছে নিশ্চয়ই উনি প্রয়োজনে বলেন, এটা আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু উনাদের যদি কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকে, এগুলো যদি উনি পাবলিকলি না বলে আমাদের জানান তাহলে আমরা হয়তো ওগুলো সমাধানের চেষ্টা করব কিংবা সুরাহা করার চেষ্টা করব। আমি সব সময় কিন্তু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু নিরসন হোক এটা চাই। আমি কোনো আচরণে সৎমাসুলভ ব্যবহার দেখি না। তবে সেটা যদি উনি পয়েন্টআউট করে দেন সেটা আলোচনার মাধ্যমে আমরা নিশ্চয়ই নিষ্পত্তি করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বর্তমান সরকার বিচার কার্যে কখনও হস্তক্ষেপ করে না, আগামীতে কখনও হস্তক্ষেপ করবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন।’
গতকাল প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘প্রশাসন বিচার বিভাগকে স্বাধীন হতে দিতে চায় না। বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের আসলে সংকটটা কোথায়’- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে আমি অত্যন্ত সম্মান করি। এ কথাটা যে উনি বলেছেন, এটার কারণ যদি বলতেন, তাহলে আমার মনে হয় অনেক সুবিধা হতো।’
‘একটা কথা কেবল বলি, শেখ হাসিনার সরকারের সময় হাইকোর্টের একজন বিচারপতির বেতন ৪৯ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। সুবিধাদি যোগ করলে এটা এক লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হবে।’
Advertisement
‘আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির বেতন ৫৩ হাজার টাকা থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা হয়েছে। সুবিধাদিসহ তা এক লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি হবে। প্রধান বিচারপতির বেতন ৫৬ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা হয়েছে।’
‘আনুষঙ্গিক সুবিধাদি যা একজন বিচারপতির মর্যাদা রক্ষার জন্য দরকার, সেটা দেয়া হয়েছে। এটা হচ্ছে অবকাঠামো বৃদ্ধির প্রথম পদক্ষেপ। আমি বলছি না, এটা বিচার বিভাগকে একটা বিরাট কিছু দিয়ে খুশি করার জন্য।’
আনিসুল হক বলেন, গুরুত্বারোপ যে কথাটা এসেছে, স্টেপ মাদারলি বিহেভিয়ার। আমার কথা হচ্ছে, স্টেপ মাদারলি বিহেভিয়ার যদি এ সরকারের আচরণের মধ্যে থাকত, তাহলে প্রধানমন্ত্রী এসব জিনিস বিচারপতিদের জন্য করতেন না।
এ সময় নিম্ন আদালতের বিচারপতিদের বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, বিচারক এবং বিচারপতিরা স্বাধীনভাবে যাতে বিচার করতে পারেন, সে কারণে এ অবকাঠামোগুলো করা হয়েছে। সেটা শক্ত করছেন কে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।
‘তাহলে কেউ যদি বলে আমরা এ সরকার, তিনি অন্যান্য সরকারের কথা কী বলেছেন, তাদেরকে ডিফেন্ড করার দরকার আমার নাই। এ সরকার বিচার বিভাগের সাথে সৎমাসুলভ আচরণ করে (বলা), সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জ আইনজীবী সমিতির দেয়া এক সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘বিচার বিভাগের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে সব সরকার। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশাসন চায় না। তারা বিচার বিভাগকে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে।’
বিচার বিভাগ সবসময় প্রশাসন ও আইন বিভাগের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে- মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আরও বলেন, প্রশাসনের লোকজন অবসরে গেলে তাদেরও রক্ষা করে বিচার বিভাগ। চাকরিকালে বিভিন্ন সমস্যায় তাদেরও বিচার বিভাগেই যেতে হয়।
প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার আইনমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।
এমইউএইচ/এমএআর/আরআইপি