চিকিৎসাবিদ্যা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরীকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৭ প্রদান করা হয়। তাঁকে নিয়ে আজকের আয়োজন-
Advertisement
এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী ১৯৩৭ সালের ১১ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৫৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর যুক্তরাজ্য থেকে ১৯৬৪ সালে এফআরসিএস এবং ১৯৬৫ সালে এমআরসিওজি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ থেকে এফসিপিএস এবং ১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্য থেকে এফআরসিওজি ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ; এফসিপিএস; এফআইসিএস এবং এফআরসিপি পান। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক পিএইচডি প্রাপ্ত হন।
ডা. তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী কর্মজীবনের প্রথমদিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন। এরপর তিনি তৎকালীন ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চে অবসটেট্রিক্স ও গাইনোকোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে সুদীর্ঘ ২২ বছর দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৪ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি ৭ বছর পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। এ সময় শিক্ষক, চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে প্রচুর সুখ্যাতি অর্জন করেন।
Advertisement
ডা. চৌধুরী বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাগত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত ছিলেন। এরমধ্যে অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পেরিনেটাল সোসাইটি, ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটি সোসাইটি অব বাংলাদেশ, এশিয়া অ্যান্ড ওশেনিয়া ফেডারেশন অব অবসটেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি, সাউথ এশিয়া ফেডারেশন অব অবসটেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি ইত্যাদি। তিনি একাধারে ২০ বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের নির্বাচিত কাউন্সিলর এবং ২ বছর এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন।
ডা. তোহিদুল আনোয়ার চৌধুরীর অনেক প্রবন্ধ ও গবেষণাপত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ জার্নাল অব অবসটেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজির সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নালের এডিটোরিয়াল বোর্ডের সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। সিঙ্গাপুর, ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত স্নাতকোত্তর পর্যায়ের তিনটি বইয়ে তাঁর লেখা তিনটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত আছে।
ডা. চৌধুরী দেশে-বিদেশে বহু সম্মাননা লাভ করেন। নেপালের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি করায় ১৯৯৪ সালে তিনি নেপালের রাজা কর্তৃক ‘গোর্খা দক্ষিণ বাহু গোল্ড মেডেলে’ ভূষিত হন। এছাড়া তিনি ২০০১ সালে ঢাকা সাউথ রোটারি ক্লাব থেকে স্বর্ণপদক; ২০০৫ সালে অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ থেকে লাইফটাইম এচিভমেন্ট স্বর্ণপদক এবং সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অবসটেটিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল পদক লাভ করেন।
নিবেদিতপ্রাণ সমাজকর্মী ডা. তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী দেশে চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিসহ এন্ডোস্কোপি, মাইক্রোসার্জারি, ক্যান্সার ও বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি চিকিৎসার ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি প্রবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে নোয়াখালীর একটি প্রত্যন্ত গ্রামে এমএম হাইস্কুল নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন যেখানে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সমধিক। ওই বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যয়ভার তিনি বহন করছেন।
Advertisement
এসইউ/পিআর