জাতীয়

এক বছরে মাদকের মামলা বেড়েছে ১০ হাজারেরও বেশি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা স্বত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মাদকের বিস্তার। বরং রাজধানীসহ সারাদেশে বাড়ছে মাদক বাণিজ্য। পুলিশের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার কথা জানানো হলেও মাদকের বিস্তার থেমে নেই। গত এক বছরে সারাদেশে মাদক সংক্রান্ত মামলা বেড়েছে ১০ হাজারেরও বেশি।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এছাড়া পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন ও কোস্টগার্ড মাদক নির্মূলে কাজ করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বরাবরই জানানো হচ্ছে, মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতির কথা। সম্প্রতি রাজারবাগে অনুষ্ঠিত ‘পুলিশ সপ্তাহ’ এর চতুর্থ দিনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। সভায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত (সিআইডি) বিভাগ প্রতিবেদন তুলে ধরে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান উদ্ধার মামলা ২০১৫ সালে ছিল ৫৬ হাজার ৬৫২টি। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৬৬৬টি।সিআইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, ২০১৫ সালে অন্যান্য অপরাধ কিছুটা কমলেও মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান অপরাধে মামলা বেড়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্কফোর্স গত জুনে একটি সভা করে। ওই সভার পর মাদক প্রতিরোধে সারাদেশের মাদকের স্পট ও ব্যবসায়ীদের তালিকা জানতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মাদক স্পটের নামসহ কোন স্পটে কী ধরনের মাদক বিক্রি হয়, তার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়। এর প্রেক্ষিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর গত বছরের জুলাইয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬৪ জেলায় আড়াই শতাধিক মাদক স্পট রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সেই প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, মাদকদ্রব্য আইনে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৬৪ হাজার ৮১৯টি। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৮ হাজার ১৯টি, ২০১১ সালে ৮ হাজার ৭৪৯টি, ২০১২ সালে ১০ হাজার ১৪টি, ২০১৩ সালে ১০ হাজার ১১১টি, ২০১৪ সালে ১১ হাজার ৭২৩টি এবং ২০১৫ সালে মামলা হয়েছে ১২ হাজার ২৯৬টি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আরও সাড়ে ৩ হাজার মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। কোকেন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, চোলাই মদ, গাঁজা ও বিভিন্ন ধরনের ইনজেকশন উদ্ধারের ঘটনায় এসব মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা শাখা) নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে নিবিড়ভাবে কাজ করছে গঠিত টাস্কফোর্স। দেশে মাদক নির্মূল নিশ্চিত করতে একযোগে মাঠে নামার নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক। গত ৩১ জানুয়ারি পুলিশ সদর দফতর থেকে আইজিপি স্বাক্ষরিত একটি পত্র সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর পাঠানো হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সফল বাস্তবায়নে পুলিশের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পত্রে বলা হয়, গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে মাদক পাচারের রুট ও স্পট চিহ্নিত করতে হবে। মাদক পাচারকারী, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী, মজুদদার, বহনকারীসহ গডফাদারদের তালিকা প্রস্তুত, নিয়মিত হালনাগাদসহ চলমান উদ্ধার ও গ্রেফতার অভিযান আরো বৃদ্ধির নির্দেশনা দেয়া হয়। মাদকের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং পুলিশ সদস্যরা কোনো মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে অবৈধভাবে সম্পৃক্ত হতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারী ও তদারকির কথাও জানানো হয়। কোনো পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, আইজিপি প্রেরিত মাদক সংক্রান্ত পত্র আমরা পেয়েছি। আমরা পুলিশ প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী মাদক নির্মূলে আরো কঠোর হতে যাচ্ছি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাবিতে নবীনবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা জঙ্গিবাদ ও মাদক। পুলিশ জঙ্গিবাদ দমন ও মাদকের বিস্তার রোধকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, দেশের অপরাধ বৃদ্ধির মূলে রয়েছে মাদক। মাদক চোরাচালানে বড় ইনভেস্টমেন্ট আছে। রাঘববোয়ালরা জড়িত। পরিকল্পনা করে মাদক বিরোধী প্রচার-প্রচারণা ও অভিযান চালানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।জেইউ/এআরএস/আরআইপি

Advertisement