আগেই বলেছিলাম, নিউজিল্যান্ড ওদের নিজেদের কন্ডিশনে খুবই শক্তিশালী একটি দল। ওদেরকে নিজেদের মাটিতে হারানো যে কারও জন্য খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অস্ট্রেলিয়া বলুন, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ইংল্যান্ড- কেউ ওদের মাঠে গিয়ে জিতে আসাটা কষ্টকর। নিজেদের কন্ডিশনে ওরা খুবই ভালো খেলে। একই সঙ্গে নিজেদের মাঠের পুরো অ্যাডভান্টেজটা তারা নিতে পারে। সেখানে অন্য দলগুলোর পক্ষে অ্যাডজাস্ট করা খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। দু’তিনটা ম্যাচ না খেললে নিজেদের অ্যাডজাস্ট করা যায় না। তারপরও সূচনাটা আমাদের ভালোই ছল। ১০ ওভারে ৫০ রান ছিল ওদের। এরপর সেখান থেকে ৩৪১ রান। বাংলাদেশের মত ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে এটা অনেক বড় স্কোর। তখনই ম্যাচটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বলতে গেলে, ১০ ওভারের পরই ওরা আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ওই সময়ই বুঝতে পেরেছিলাম, ধীরে ধীরে ম্যাচটা আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।ব্যটিংয়ে নেমে ৩৪১ রান তাড়া করতে হলে শুরুটা খুবই আক্রমণাত্মক হওয়া প্রয়োজন। প্রথম ১০ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৭০-৮০ রানের একটা পার্টনারশিপ। তাহলে পরে সেটা মিডল অর্ডার কিংবা লেট অর্ডারের জন্য সাহসের একটা জায়গা তৈরি করে দিতো। এবং আমাদের জয়ের একটা সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু সেখানে ধ্বস নামছে শুরুতেই। দ্রুত তিনটি উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। সৌম্য আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, যাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা ছিল। গত বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান, সে কিন্তু বিপিএল বলুন কিংবা তার আগে থেকে দারুণ ফর্মে ছিল। সে যখন কোন রান না করেই ফিরে গেলো, তখনই আমরা ম্যাচ হেরে গেছি। আসলে লক্ষ্যটা আমাদের সামনে অনেক বড় ছিল। সে তুলনায় ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল অনেক খারাপ। বোলাররাও অনেক বেশি রান দিয়েছে। ৯ ওভারে ৭০ রান দিয়েছে তাসকিন। মোস্তাফিজও অনেক বেশি রান দিয়েছে। তার জন্য অবশ্য একটু কঠিনই ছিল নিজেকে অ্যাডজাস্ট করা। কারণ, এতদিন পর এসে আন্তর্জাতিক ম্যাচে নিজেকে খাপ খাওয়ানোটা খুব সহজ কথা নয়। মাশরাফি উইকেট পায়নি। বলতে গেলে সবাই রান দিয়েছে।ব্যাটিংয়ে সাকিব ভালো ব্যাট করেছে। তামিম যে ইনিংসটা খেলেছে, সেটা আরও বড় করা উচিৎ ছিল। অথ্যাৎ, আমরা ব্যাটসম্যান বেশি নিয়ে খেলেছি। তবে, সে অনুযায়ী সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। ব্যাটিংয়ে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষয়গুলো শোধরাতে না পারলে সেখানে ম্যাচ জেতাটা কঠিন হবে। গতকালই আমি বলেছিলাম, ম্যাচ জিততে হলে- ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, তিন ডিপার্টমেন্টেই খুবই ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে। ফিল্ডিং ছিল খুবই বাজে। এত বাজে ফিল্ডিং করে ভালো ফল আশা করা যায় না। অথচ তুলনা করলে দেখুন, নিউজিল্যান্ড কিন্তু সব ডিপার্টমেন্টেই ভালো খেলেছে। দারুণ ফিল্ডিং, নিয়ন্ত্রিত বোলিং, আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। সব ক্ষেত্রেই তারা ছিল এগিয়ে।বাংলাদেশ দল নিয়ে অনেকেই কথা বলছে। সৌম্যকে নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। আমারও মনে হয়, সৌম্য অনেক বেশি সুযোগ পেয়েছে নিজেকে ফেরানোর। এত ভালো জায়গায় ব্যাট করছে। সেখানে তাকে রান করতেই হবে। এ সিরিজটা এ কারণে তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে অনেক সৌভাগ্যবান বলতে হবে, যে এতদিন বাজে খেলেও সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। অন্য কোনো ক্রিকেটার কিন্তু এত বেশি সুযোগ পায় না। এবার তাকে নিয়ে ভাবার সময় চলে আসছে। নির্বাচকদেরও এবার তাকে নিয়ে ভাবতে বসতে হবে। তাসকিনের বোলিং নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ৯ ওভারে ৭০ রান দিয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলিং করতে ব্যর্থ হয়েছে সে। তাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। আমার কথা হচ্ছে, সে তো এমন মানের ক্রিকেটার যে, তাকে দলে নেয়াই হয় শুধু বোলিংয়ের জন্য। তার কাছ থেকে ব্যাটিং কিংবা ভালো কোনো ফিল্ডিংয়ের আশাও করা হয় না। তো সে যদি অর্ডিনারি মানের বোলিং করে, তাহলে তাকে একাদশে রাখাই হবে দলের জন্য ক্ষতিকর। দলে টিকে থাকাও ওর জন্য অনেক কষ্টকর। শুধু তার বিষয়ই নয়, যে কোনো ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। যাকে যে কাজের জন্য নেয়া হবে সে যদি ওই জায়গাটায় ব্যর্থ হয়, তাহলে তাকে নিয়ে নির্বাচকরাও চিন্তা করতে শুরু করে দেবে। তাসকিনেরও বোলিংটা শতভাগ ভালো করার চেষ্টা করতে হবে। তবে আজ আমার কাছে ভালো লেগেছে মোসাদ্দেকের ভালো ফর্ম। বোলিংয়ে ভালো করেছে। ব্যাটিংটাও করেছে দারুণ। তার এই ফর্মে থাকাটা দলের জন্য ভালো। তবে, আমার কথা হচ্ছে, এটা যদি দলের জন্য কাজেই না লাগে তাহলে ভালো খেলে লাভ কী। নিউজিল্যান্ডকে যদি ৩০০ কিংবা ৩১০-এর মধ্যেও বেধে রাখা যেতো তাহলে জয়ের আশা করা যেতো। কারণ, যে উইকেটে খেলা হয়েছে- এখানে ৩০০ কিংবা ৩১০ রান তাড়া করার মতই। আগে ব্যাটিং করে ৩৪০ রানের বেশি করে ফেলে, তখন সে ম্যাচ জয় করাটা খুব কঠিন হয়ে যায়। মুশফিকের ইনজুরিতে পড়াটা আমাদের জন্য বড় একটি চিন্তার বিষয়। তার মত ব্যাটসম্যান ইনজুরিতে পড়ে মাঠের বাইরে চলে গেলে আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। আশা করবো, দ্রুত সে আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।আইএইচএস/
Advertisement