দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রভাষক পদে নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। প্রভাষক পদে নিয়োগে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করে। এটি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে যদি অনিয়ম হয় তাহলে সেখানে নীতিনৈতিকতার আদৌ কি কোনো বালাই থাকে? ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগ : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করে । এতে প্রতিষ্ঠানটি দেখাচ্ছে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রভাষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এসব শিক্ষকরা ছাত্র থাকাকালে বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে অতিরিক্ত নম্বর দেয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক করে একাডেমিক পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেন শিক্ষকরা। ২০০১ থেকে ২০১৬ সালের ঘটনা নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণাটি করা হয়। দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়োগের আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম শুরু হয়। নিয়োগ বোর্ড গঠন, সুবিধামতো যোগ্যতা পরিবর্তন বা শিথিল করা, জবাবদিহি না থাকার মাধ্যমে এ অনিয়মের শুরু হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টিতে নিয়োগ বোর্ড গঠনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শের সুযোগ বিদ্যমান। কোনো কোনো শিক্ষক পছন্দের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরীক্ষার ফল প্রভাবিত করেন। পরবর্তী সময়ে আবার তাদেরই নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া বাজার করাসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে আগে থেকেই একাডেমিক পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেও একাডেমিক পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেন শিক্ষকরা। এসব শিক্ষকরা পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্ন জানানো ও পরবর্তী সময়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের তাদের সহায়তা করে। এসব অনিয়মের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর সুযোগ থাকলেও সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে সিন্ডিকেট নিয়োগ চূড়ান্ত করে।এই প্রতিবেদন নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নানা প্রশ্ন তুলতে পারেন। কোন ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চালানো হয়েছে তার নাম কেন প্রকাশ করা হলো না, তাছাড়া প্রত্যক্ষ কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ আছে কিনা। ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র দিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ঢালাওভাবে মন্তব্য করা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম এখন সর্বজন বিদিত। টিআইবির প্রতিবেদনে যে সকল বিষয় উঠে এসেছে তা গণমাধ্যমেও হরহামেশাই উঠে আসছে। সুতরাং সমস্যা অস্বীকার না করে সমাধানের পথে হাঁটাই হবে যুক্তিযুক্ত। শিক্ষকতার পেশা অন্যসব পেশার মতো নয়। এখানে অযোগ্যরা স্থান করে নিলে তার ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সকল ধরনের নিয়োগ দেয়া উচিত। এ ব্যাপারে কোনো অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরাধের শাস্তি না হলে এ ধরনের নিয়োগ বন্ধ করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সঠিক মান বজায় রাখতে সকলকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এইচআর/পিআর
Advertisement