"১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল জনগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অকৃত্রিম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি তাদের কথা আজ গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। বিশেষভাবে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি উসমানীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল অবিসংবাদিত নেতাকে আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি।"এই কথাগুলো শুনলে যেকোন মানুষই মনে করবেন দেশের প্রগতিশীল কোন রাজনৈতিক দল বা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের কোন ব্যক্তি বলছেন। বিষয়টা কিন্তু তা নয়। এরপরের কথাগুলো শুনলে পাঠক বুঝতে পারবেন একথাগুলো কী রকম বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।পরের বাক্যগুলো এ রকম, "আজকের এই মুহূর্তে গভীর শ্রদ্ধার সাথে আরও স্মরণ করছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী..."সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হয়েছে বলে সংগঠনটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে। দলটি আরো জানিয়েছে দলটির নির্বাচিত আমীর মকবুল আহমাদ শপথ গ্রহণ করেছেন। তিনি তিন বছরের জন্য গোপন ব্যালটে নির্বাচিত হয়েছেন। যেহেতু দলটি এখন গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছে তাই শপথ অনুষ্ঠান কোথায় হয়েছে, তা দলটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বা ওয়েব সাইটে বলা হয়নি। গোপন জাযগায় শপথ নেয়ার তার দেয়া বক্তব্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটির নয়া আমীরের পয়লা বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বরাবরের মতোই তারা মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। একদিকে জামায়াতের আমীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবার একই সাথে তিনি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন যাদের হাতে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন, একদিকে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতাদের স্মরণ করছেন আবার শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করে কসাইয়ের ভূমিকা নিয়ে মুক্তিকামী মানুষদের হত্যা করেছে। তিনি এটাও বলেছেন ওই সব স্বাধীনতাবিরোধীদের নাকি বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিহিংসামূলকভাবে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। কতবড় ভণ্ড হলে এরকম আচরণ করা যায়?বহুল পরিচিত প্রবাদটি এক্ষেত্রে আবারো বলা যায়-কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। কোন কোন রাজনৈতিক ভাষ্যকারকে দেখছি জামায়াতের নয়া আমীর নির্বাচন নিয়ে বলছেন দলটির ঘুরে দাঁড়াতে হলে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে, যারা ৭১ এ রাজাকারী করেননি তাদের নেতা বানাতে হবে। এসব যুক্তি দিয়ে যারা জামায়াতের রাজনীতির বিশ্লেষণ করেন তারা এটা ভুলে যান কী করে যে ৪৫ বছর ধরে জামায়াত তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায়নি। ৭১ এ যে তারা ভুল করেছিল সেটিও স্বীকার করেনি। জামায়াতের নয়া আমীর যতই মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করুন না কেন তিনি কিন্তু ৭১ এর জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেননি। বরং তিনি বলেছেন, আটক যুদ্ধাপরাধীদের নাকি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে আটকে রাখা হয়েছে আর যাদের ফাঁসি হয়েছে তাদের ওপর নাকি জুলুম করা হয়েছে। জামাতের নয়া আমীরের এই রকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের পর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে জামায়াত যেরুপেই আবির্ভূত হোক না কেন, দলের নেতা যাকেই করা হোক না কেন তাদের বিষ ছড়ানোর কাজ অব্যাহত থাকবে। তাই দলটিকে রাজনীতি করার সুযোগই দেয়া উচিত নয়। এই দলটির সাথে যারাই জড়িত হবেন তাদেরকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে, অন্তত যতদিন তারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে নাকে খত না দিয়ে বলবেন ৭১ এ তারা অন্যায় করেছিলেন। অনেকে বলেন যে সকল জামায়াত নেতার জন্ম ৭১ এর পর হয়েছে তারা কেন মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অন্যায়ের দায়ভার নিবেন। কিন্তু বাস্তবতা হল ৭১ পরবর্তী জামায়াতী প্রজন্মও ৭১এ তাদের ভূমিকাকে মেনে নিচ্ছেন, তারাও তাদের পূর্বসুরিদের নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করে চলেছেন। তাই প্রশ্নটা ৭১ এর পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কোন বিষয় নয়, বিষয় হল তাদের নৈতিক অবস্থান কোথায়? আমরা দেখতে পাচ্ছি জামায়াতীদের অবন্থান বিন্দুমাত্র নড়চড় হয়নি। তারা আগেও স্বাধীনতা বিরোধী ছিল, ভবিষ্যতেও তারা রাষ্ট্রবিরোধী নানা অপকর্ম করে যাবে বলেই বর্তমানের কাজকর্মে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। লেখক : সম্পাদক, ডিবিসি নিউজএইচআর/পিআর
Advertisement