সাহিত্য

ডাহুকের প্রয়াণ দিবসে

বহুদিন হলো শব্দেরা মিলছে না, কখনো পড়ার ফাঁকে কিংবা গানের মাঝেদিন দুপুরে খাবার ঘরে। শোয়ার ঘরটা এলোমেলো- ঘুম থেকে ওঠা কিশোরের এলোমেলো চুলে যেমন সকাল লেপ্টে থাকেআরো কিছুটা ওম,  তারপর ধোঁয়া উঠবে চুমুকে এবং প্রতিদিন মরবে শিশু, আহত রক্তের বীজে ব্যাপ্ত হবে মানুষের অকারণ কাম! এই কী নির্লিপ্ততা? এই কী যাপিত সম্ভোগ? এ কী তবে অভিশাপ? বেঁচে থাকা আজন্ম পাপ! তবে তো ফুলেরাও বেঁচে ওঠে! তবে তো উঠোনে ছড়িয়ে থাকে সোনালি ধানের মত স্বপ্ন আহার আর পাখিদের সমস্বরে জাগে সেই নিকোনো উঠোন! যে চলে গেছে পনেরো বছর আগে, যার শব প্রতিটি জীবিত সন্তানের আহাজারিতে ভারি করে রেখেছিল মাটি, তার শোবার ঘরটায় ফুটেছে কামিনী।  ফুল ফুটেছে তাই ডাহুক ডেকেছিল, শব্দ শুনে নূরজাহান মাঝ রাতে প্রবল ঘেমে ওঠে। ফিসফিস করে বলে, `আমি রুই মাছের ঝোলে সর পড়তে দিয়েছি, আর আছে তোমার প্রিয় সব খাবারের বাহার! তুমি আসবা না? খুব ভাল আছ ওই পাড়ে? কাঁসার থালায় বাটি উপুড় করে রাখা আছে গরম ভাত, তাতে ঘি রেখেছি ঢেলে। আমার পরিপাটি খোঁপার উপরিভাগে ফর্সা সিঁথি উঁকি দেয়। পায়ে আলতা, কোমরের বাঁক তোমার সবচাইতে পছন্দের ছিল নাকি? সবার জন্য রাধি। কত পাড়ার লোক এলো, গেলো। মা ডেকে খেয়ে গেলো, তৃপ্তির ঢেঁকুরে চৌকির আসন ভরপুর! তুমি আসবা না? আমার ঠোঁটের ভিতরে পান যে শুকায়ে যায়!` এইসব প্রেম বলে মানো? এইসব ভালবাসা, ভাবি? যে চলে যায় ... তাকে মনে করে রাত হয় পার! তুমি বলো `ভালবাসি!` আমি হাসি ... আমারও উঠোন জুড়ে সারা দুপুর ধান মাড়িয়ে দেয় কেউ, ঢেঁকির ছন্দে তাঁতের শাড়ির ভাঁজ কেঁপে ওঠে। আমার একলা পুকুর ধারে আড়মোরা ভাঙ্গে জ্যোৎস্না আর মনেতে আষাঢ়ের অপেক্ষা নিয়ে ভাবি, কতদিন কাঁথার গন্ধ নেইনি!  যে যায়, সে সব নিয়ে যায়। আমারও ছিল কিছু অধ্যায় তার সাথে! কিছুটা আত্মকথনে থাকে, কিছুটা লোকালয়ে এর ওর কানে, কানাকানি। বিশ্বাস করো, মাঝরাতে আষাঢ়ের পানি টিনের চালায় আর কিছু জল এ চোখেও উথলিয়ে ওঠে। এইচআর/পিআর

Advertisement