হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফয়সাল আমিনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ও আসামিপক্ষকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পক্ষের সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
Advertisement
এ ঘটনায় বিচার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর ছোট ভাই।
ফাঁস হওয়া অডিওতে এসআই ফয়সলকে বলতে শোনা যায়, ‘নিয়ম হলো রিপোর্ট দিয়ে টাকা নেওয়া। আগে যেহেতু টাকা নিয়ে ফেলছি, এখন দায়সার অবস্থায় পড়ে গেছি। আমি টাকা ছাড়া কোনো কথা বলি না। একজন মাত্র ৭ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। আপনার টাকাটা নিয়েই এখন বিপদে পড়ছি। সবাই জেনে গেছে।’
জবাবে ভুক্তভোগী বলেন, ‘সে আমার আসামি। ২০ হাজার না ৩০ লাখ টাকা দিলেও আপনি খাইবেন। কিন্তু আমার বিষয়টা যেন ঘুরিয়ে না দেন। ধান বিক্রি করে, ঋণ করে টাকা দিয়েছি।’
Advertisement
ওই অডিও প্রকাশের পর ৮ জুলাই ভুক্তভোগীর ছোট ভাই সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, প্রায় ৯ মাস আগে ওই ব্যক্তির স্ত্রী প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই ফয়সাল আমিন।
অভিযোগকারীর দাবি, লেখার খরচ ও তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত দেওয়ার কথা বলে এসআই ফয়সাল তাদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। পরবর্তীতে আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করলে পরিবারটি তা দিতে না পারায় তিনি আসামিপক্ষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, এসআই ফয়সালের ইন্ধনে চলতি বছরের ২৯ মে বাদীর স্বামীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় আসামিপক্ষ। এতে তার একটি হাত ও পায়ের হাড় ভেঙে যায়। বুকে ও পেটে গুরুতর জখম হয়। তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। যার মধ্যে ৩ দিন আইসিইউতে ছিলেন।
Advertisement
থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে এসআই ফয়সাল আমিন তাকে বলেন, ‘তোমরা তো ১৫ হাজার টাকা দিয়েছো। এরপর আর যোগাযোগ করোনি। তাই আগের রিপোর্টই পাঠিয়ে দিয়েছি।’
ভুক্তভোগী বলেন, দ্বিতীয়বার টাকা দাবি করলে আমি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করি। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি আমার মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও ডিলিট করে দেন। পরে তা পুনরুদ্ধার করি। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি মিথ্যা প্রতিবেদন দেন এবং আসামিপক্ষকে উৎসাহিত করেন। এসআই ফয়সালের ঘুষ বাণিজ্যের কারণে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা ফয়সাল আমিন ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট মহলের তদবিরে বিশেষ কোটায় বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ পান। ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর চুনারুঘাট থানায় যোগ দেন। এরপর থেকে একাধিক আলোচিত মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান। যার মধ্যে একটি ছাত্র আন্দোলনের মামলাও রয়েছে। ওই মামলায় দায়িত্বে থাকাকালে গ্রেফতার বাণিজ্য শুরু করলে সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, তার বিরুদ্ধে জুয়ার বোর্ডে অভিযান চালিয়ে টাকা ‘গায়েব’ করার অভিযোগও রয়েছে। তিনি প্রায় সব মামলায় অর্থের বিনিময়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং আসামিপক্ষ থেকে সুবিধা নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করেন। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও এসআই ফয়সাল আমিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে চুনারুঘাট-মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এ.কে.এম সালিমুল হক বলেন, ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীর ভাই আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত এসআই ফয়সাল আমিন ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ভুল হয়েছে। বিষয়টি যেন সুদৃষ্টিতে দেখা হয় এ অনুরোধ জানাচ্ছি।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এফএ/এএসএম