পবিত্র রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মাসব্যাপী রোজা থাকার জন্য নানা রকম আয়োজনে ব্যস্ত থাকে। শুধু তাই নয় রোজায় বলতে গেলে সামগ্রিক জীবনযাত্রায়ই একটি পরিবর্তন আসে। মাসব্যাপী বিরাজ করে ধর্মীয় আবহ। রোজা পালনের সুবিধার্থে ৯টা ৫ টার অফিস সময়েরও পরিবর্তন হয়। সাড়ে তিনটা-চারটার মধ্যে ছুটি হয়ে যায় সরকারি বেসরকারি সব অফিস। যানজট ঠেলে, পরিবহনের দুষ্প্রাপ্যত্যাকে উপেক্ষা করে মানুষজন হন্যে হয়ে ছুটে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার জন্য। সকলে মিলে এক সাথে ইফতার করার সে এক অন্য রকম আনন্দ। এতে পারিবারিক বন্ধও দৃঢ় হয়। ইফতারের পর এক মাসব্যাপী তারাবিহ নামাজে আদায় করেন রোজাদাররা। কোনো কোনো মসজিদে খতম তারাবিহ পড়ানো হয়। এতে ৩০ দিনে কুরআন শরীফ পড়া শেষ করা হয় নামাজের মধ্যেই। ঢাকা শহরের প্রত্যেক পাড়া মহল্লায় সেহরী খাওয়ার আগে কাসিদার মাধ্যমে রোজাদারদের জাগাতে দেখা যায়। বিশেষ করে পুরান ঢাকার পাড়া মহল্লার তরুণদের ঢোল, কাসার ব্যবহৃত জিনিপত্রের ওপর লাঠির আঘাত করে রোজাদারদের জাগানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। কখনো প্রত্যেক বাসাবাড়িতে গিয়ে দরজায় নক করেও রোজাদের জাগাতে দেখা যায়। এছাড়া রোজাদার ওঠ, সেহরীর সময় হয়েছে, ইত্যাদি গানের মাধ্যমে জাগাতে দেখা যায়।মানুষজনের মধ্যে ধর্মকর্মে মনোযোগী হবার একটা লক্ষ্যণও দেখা যায় এই রমজানে। পাপ-তাপ থেকে তারা দূরে থাকার চেষ্টা করেন। ইফতার রমজানের অন্যতম আকর্ষণ। বিকেল থেকেই শুরু হয়ে যায় ইফতার প্রস্তুতি। ইফতার উপলক্ষে তারকা হোটেল থেকে শুরু করে ফুটপাথেও থাকে নানা আয়োজন। হোটেল রেস্তোরাঁর সামনে টাঙানো শামিয়ানার নিচে বড় বড় ডেকচিতে রান্না করা হয় হালিম, ভাজা হয় জিলাপি, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপসহ শত পদের ইফতার। চকবাজারের ইফতারি সব ঢাকাবাসীরই প্রিয়। ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ইফতারির বাজার এবারও সরগরম। এখানকার ইফতারির মধ্যে অন্যতম আস্ত মুরগির কাবাব, বঁটিকাবাব, টিকাকাবাব, কোফতা, চিকেন কাঠি, শামিকাবাব, শিকের ভারি কাবাব, সুতিকাবাব, কোয়েলপাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, জিলাপি, শাহি জিলাপি, সমুচা, আলাউদ্দিনের হালুয়া, হালিম, দইবড়া, লাবাং, কাশ্মীরী শরবত ও ৩৬টি উপকরণে তৈরি মজাদার খাবার ‘বড়বাপের পোলায় খায়’সহ কত না পদ।রোজার পর পরই ঈদ। তাই রাজধানীর শপিংমলগুলো ইতিমধ্যেই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এছাড়া রাজধানীর দর্জি দোকানগুলোও এখন মহাব্যস্ত। ঈদ সামনে রেখে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরছে দর্জি ঘরের চাকা। নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই যেন দর্জিদের। আমাদের দেশে ইফতার কালচার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলো ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে রোজার মাসে তাদের গণসংযোগের কাজটি করে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে ইফতার মাহফিলে মিলিত হন। বিভিন্ন সংগঠন, সমিতির উদ্যোগেও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। রমজানের প্রথম ১০ দিনকে বলা হয় রহমতের। দ্বিতীয় ১০ দিনকে বলা হয় মাগফেরাতের। তৃতীয় বা শেষ ১০দিনের রমজানকে বলা হয় গুনাহমাপের বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি। ইতোমধ্যে হয়েছে গুনাহমাপের বা জাহান্নাম থেকে মুক্তি রোজা। রমজান উপলক্ষে মুসল্লিদের মধ্যে দান খয়রাতের প্রবণতা বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই গরীব ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে দান করতে দেখা যায়। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রথম থেকেই ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।রমজান হচ্ছে সংযম এবং ত্যাগের মাস। এই মাস আত্মশুদ্ধি লাভ করার মাস। পরস্পরের প্রতি হিংসা, দ্বেষ, ভেদাভেদ ভুলে সকলে মিলে দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করাই হোক পবিত্র রমজানের শিক্ষা। এইচঅার/পিআর
Advertisement