বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পর বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারপার্সন মাহফুজা আক্তার কিরণ। বাফুফে ভবনে তিনি প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মিয়ানমারের বিপক্ষে দর্শনীয় দুই গোল করা ঋতুপর্ণা চাকমাকে উপাধি দিয়েছেন ‘বাংলাদেশের মেসি’ হিসেবে।
Advertisement
পুরুষ দলের আছেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী, মেয়েদের দলে ঋতুপর্ণা চাকমা-কীভাবে তুলনা করবেন? কিরণ বলেছেন, ‘দুই দলই আমাদের। তুলনার কিছু নেই। ঋতুপর্ণা বাংলাদেশের মেসি। হামজাও ভালো ফুটবলার কোনো সন্দেহ নেই। হামজাও আমাদের দেশের জন্য গর্বের। সামনে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আছে। আমার বিশ্বাস, সেখানেও হামজা ভালো করবে। ছেলেরাও এগিয়ে যাবে। ছেলে-মেয়ে দুটো দলই আমাদের, তুলনা করার কিছু নেই। কিন্তু আবারও বলছি, ঋতুপর্ণা আমাদের মেসি, এটা বলার অপেক্ষা নেই। ও যেভাবে বল টেনে নিয়ে যায়, মেসি ছাড়া তো আর কারও মতো নয়।’
কিরণ যোগ করেন, ‘মেয়েরা আমার কথা শোনে। ম্যাচের আগে আমি তাদের শপথ পড়াই, কথা বলি। আমি যা যা বলি, ওরা ঠিক সেগুলো মাঠে বাস্তবায়ন করে। এ থেকেই বোঝা যায়, ওদের নিবেদন ও শৃঙ্খলা কতটুকু আছে। মিয়ানমার ম্যাচের আগে আমি তাদের বলেছিলাম ২০ মিনিটের ভেতর অবশ্যই গোল করবে। সেটার জন্যই মাঠে নামবে। এগিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ওরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। ওদের মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য এটা তোমাদের করতে হবে। ঋতুপর্ণা কিন্তু ১৮ মিনিটে গোল করেছে। তারা সেই কথা রেখেছে এবং রুপনাকে যা বলেছি, গোলপোস্টে ঠিক সেটাই করেছে। প্রতিটা জিনিস যা যা বলেছি, সব খেলোয়াড় তা করেছে।’
কোচকে ধন্যবাদ জানাতেও ভুল করেননি কিরণ। বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই পিটার বাটলারকে। তিনি অনেক ভালো কোচ। তিনি জানেন ডাগআউটে থেকে কীভাবে দলকে এগিয়ে নিতে হবে এবং সেই কাজটাই করেছেন। উনার সঙ্গে আমার অনেকবার কথা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও আমরা সেভাবে এগিয়ে যাবো।’
Advertisement
মেয়েদের এই অর্জনের পর এশিয়ার অনেক দেশ থেকে অভিনন্দনবার্তা পেয়েছেন উল্লেখ করে কিরণ বলেছেন, ‘আমাদের জন্য অনেক বেশি সম্মানের। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা এশিয়া থেকে আমি বার্তা পেয়েছি। কারণ আমি এএফসির নির্বাহী কমিটির সদস্য, ফিফা কাউন্সিলেরও সদস্য ছিলাম। বিশ্বব্যাপী সবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। এই সফলতার জন্য সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলেছেন, আমাদের পরিশ্রমের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে।’
বাংলাদেশের বিশ্বকাপে খেলারও সুযোগ আছে উল্লেখ করে কিরণ বলেছেন, ‘২০২৬ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপ হবে। সেখানেও আমাদের অনেক সুযোগ আছে। সেরা ছয়টি দল চলে যাবে বিশ্বকাপে। পরের দুটি দল আবার খেলবে অলিম্পিকে। কাল-পরশুর ভেতরে আমি বাফুফে সভাপতির সঙ্গে কথা বলব। অবশ্যই পরিকল্পনা আছে। কারণ সুযোগ বারবার আসে না। আমাদের যেহেতু সুযোগ এসেছে আমরা সেটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবো। আমরা অবশ্যই আরও শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলতে চাই। কারণ এশিয়ান কাপ যখন খেলতে, তখন কিন্তু অনেক শক্তিশালী দেশ খেলবে। জাপান, কোরিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া থাকবে। তাই সেই প্রস্তুতি নিয়েই আমাদের যেতে হবে। যে কয় মাস পাব, আমরা সেটাকে সেভাবে ব্যবহার করবো।’
বিদেশি লিগে মেয়েদের পাঠানো প্রসঙ্গে কিরণ বলেছেন, ‘এই যে অফারগুলো আসে, এটা কিন্তু আমরা যোগাযোগ করে ওইভাবে নিয়ে আসতে পারব না। ওটা সম্ভব না। ফাইনাল খেলতে ওরা যখন অস্ট্রেলিয়াতে যাবে, ঋতুপর্ণা এই লেভেলে খেললে তখন দেখবেন ইউরোপিয়ান ক্লাব থেকে ওর কাছে অফার আসবে। বিভিন্ন দেশ থেকে অফার আসবে। খেলোয়াড়দের খেলাগুলো মানুষের দেখতে হবে। মানুষ যখন খেলা দেখবে, তখন অফার আসবে। ভুটানে ওরা খেলছে নিজেদের ইচ্ছায়। আমরা কিন্তু ভুটানের লিগে খেলানোর পক্ষে না। কারণ ভুটানের লিগ তেমন ভালো নয়। ওরা যেতে চাচ্ছে, আমরা চিন্তা করলাম ওদের মেন্টাল রিফ্রেশমেন্ট হবে...যাক খেলে আসুক। ভুটান লিগে খেলে তো অবশ্যই উন্নতি করবে না। ওদের ভালো লিগে খেলতে হবে।’
আরআই/এমএমআর/জিকেএস
Advertisement