• উদ্বোধনের পর থেকে অব্যবহৃত পড়ে আছে ৮ কোটি টাকার অ্যাকাডেমি• নেই কোনো সাংস্কৃতিক কার্যক্রম• অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ভবন-সরঞ্জাম• বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, বিল বাকি ৭-৮ লাখ টাকা
Advertisement
অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে দিনাজপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমি। কার্যক্রম পরিচালনা না হওয়ায় এখানকার অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু জিনিস চুরিও হয়েছে। ভুতুড়ে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে ক্যাম্পাসটি। ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিষ্ঠানটি এখন পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে।
সাঁওতাল, ওড়াও, রাজবংশিসহ সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ১৭টি অংশের মধ্যে বড় একটি অংশের বসবাস উত্তরের জেলা দিনাজপুর। তাই তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য লালন এবং সংস্কৃতি ও ভাষা চর্চায় ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় সাংস্কৃতিক একাডেমিটি। উদ্বোধন জমজমাট হলেও এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে অনেক বছর। তবে এখানও হয়নি কোনো সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। দেখভাল না থাকায় ভবনের অনেক জায়গায় ধরেছে ফাটল, অনেক স্থানে তৈরি হয়েছে আবর্জনার স্তূপ, ভরে গেছে ঝোপঝাড়ে।
‘উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠান দেওয়া হয়নি, অ্যাকাডেমি চালু করার জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।’
Advertisement
অস্থায়ী ভিত্তিতে দুইজন কর্মচারী থাকলেও সেখানে গিয়ে তাদের দেখা মেলেনি। যেখানে সাংস্কৃতিক কর্মীদের পদচারণায় মুখরিত থাকার কথা, সেখানে এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন হারিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ভাষা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে হাজং মাতৃভাষা বাঁচাতে অন্তর হাজংয়ের লড়াইজানা যায়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির প্রচার, প্রসার, ভাষা এবং তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল দিনাজপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক অ্যাকাডেমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার মীর্জাপুর সুইহারী সরকারি কলেজ মোড়ে সাংস্কৃতিক অ্যাকাডেমির উদ্বোধন করা হয়।
অ্যাকাডেমিতে রয়েছে আধুনিক মঞ্চায়ন উপযোগী শব্দ, আলোক এবং অ্যাকুয়েস্টিক ব্যবস্থাসহ ৩০০ আসনবিশিষ্ট একটি মিলনায়তন। এছাড়া ৫০০ আসনবিশিষ্ট মুক্তমঞ্চ ও একটি প্রশিক্ষণ ভবন। তবে উদ্বোধনের পর কোনো প্রকার কার্যক্রম পরিচালনা না হওয়ায় অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। পানির টিউবওয়েলটিও চুরি হয়ে গেছে।
‘অ্যাকাডেমির সংস্কার এবং কার্যক্রম চালুর জন্য আমরা অর্থ চেয়ে আবেদন করেছি। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ৬-৭ লাখ টাকা। খোঁজখবর নিয়ে আরও বিস্তারিত জানাতে পারবো।’
Advertisement
শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। কাঁচের জানালাগুলো ভেঙে গেছে। গাছ, লতা-পাতায় ভরে গেছে ক্যাম্পাসটি। সুনসান পরিবেশে বিরাজ করছে ভুতুড়ে অবস্থা।
জানা যায়, উদ্বোধনের কিছুদিন পর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এটি শিল্পকলা অ্যাকাডেমির কাছে হস্তান্তর করে। এরপর এটি আর আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
দিনাজপুর আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি লুকাস সরেণ বলেন, উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠান দেওয়া হয়নি, অ্যাকাডেমি চালু করার জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
দিনাজপুর আদিবাসী মুক্তি মোর্চার সভাপতি আল বিনুস টুডু বলেন, জোর গলায় এই সরকারকে বলতে চাই, যেন অ্যাকাডেমিটি অচিরেই চালু করা হয়।
দিনাজপুর জেলা কালচারাল কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী কমিশনার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুহা. সাদ্দাম হোসেন বলেন, অ্যাকাডেমির সংস্কার এবং কার্যক্রম চালুর জন্য আমরা অর্থ চেয়ে আবেদন করেছি। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ৬-৭ লাখ টাকা। খোঁজখবর নিয়ে আরও বিস্তারিত জানাতে পারবো।
এফএ/জিকেএস