ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চাঁনখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩ জুলাই দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
Advertisement
রোববার (২৯ জুন) ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে এই মামলার চার আসামিকে হাজির করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল এ দিন নির্ধারণ করে আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন চেয়ে শুনানি শেষ করেন। ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত প্রথম কোনো শুনানি শুরু হওয়ায় আজকের দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
Advertisement
অন্যদিকে, এ মামলায় আসামিপক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন শুনানির জন্য সময় চাওয়া হয়। এরপর শুনানির জন্য পরবর্তী দিন ঠিক করেন আদালত। আসামিপক্ষের করা অব্যাহতির আবেদন শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দিন ধার্য করা হয়।
আরও পড়ুনচানখাঁরপুলে আনাসসহ ৬ জন হত্যা: চার আসামি ট্রাইব্যুনালেসাবের হোসেন ও আছাদুজ্জামান মিয়াসহ ৬২ জনের নামে অভিযোগএর আগে মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় তারা হলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল। তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও পলাতক আসামিরা হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে। আইনজীবী মো. কুতুবউদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে চাঁনখারপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গত ২৫ মে আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় আসামিরা নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করেন।
Advertisement
তদন্ত সংস্থা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার দেওয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত করতে তদন্ত সংস্থার সময় লেগেছে ছয় মাস ১৩ দিন। তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, দুটি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১টি এবং ছয়টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি করা হয় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে। তাদের মধ্যে গ্রেফতার আছেন ইন্সপেক্টর আরশাদ, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।
এফএইচ/কেএসআর/জেআইএম