ছোট ফেনী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে রাস্তা ও জনপদ। ফেনীর সীমানায় নোয়াখালীর মুছাপুরে স্লুইচগেট (রেগুলেটর) না থাকায় নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, ফলে দিন দিন ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। এতে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামে একের পর এক বাড়িঘর ও আবাদি জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। বিলীন হয়েছে একসময়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাজিলেরঘাট-তালতলি সড়ক। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। অনেকে ভিটেমাটি ছেড়ে শহরে ভাড়াবাসায় চলে গেছেন।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর আগেও সড়কটি ছিল কার্পেটিং সড়ক। ওই সড়কে চলত রিকশা, অটোরিকশা, ট্রলি ও অন্যান্য যানবাহন। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল এই রাস্তাটি। ২০০৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে শুরু হয় নদীভাঙন। প্রায় ২০ বছর ধরে ভাঙতে ভাঙতে এখন আর সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই। দীর্ঘদিনেও কোনো মেরামত বা পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে পরিচিত জগতপুর-তালতলি সড়কটি এখন সম্পূর্ণ চলাচলের অযোগ্য। কোথাও কোথাও ইটের কিছু চিহ্ন এখনো দেখা গেলেও অধিকাংশই নদীর করাল গ্রাসে বিলীন।
পূর্ব জগতপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে কৃষক রমজান আলী বলেন, আমরা দিনমজুর, দিনে এনে দিনে খাই। এখন ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই। বাবার দেওয়া ১২ শতক জমি নদীতে চলে গেছে। সেই জমিতেই চাষ করে সংসার চলত। এখন শুধু ঘরের জন্য একটি ভিটা বাকি আছে। জোয়ার এলেই আতঙ্কে থাকি, কখন ঘরও নদীতে চলে যায়। জিও ব্যাগ ফেলে ঘরটা রক্ষা করার চেষ্টা করছি, যেভাবে ভাঙছে তাতে মনে হয় না ঘরটা থাকবে। এখনও কোনো সরকারি সহায়তা পাইনি। আমাদের গ্রামের নজরুল ইসলাম ও আবুল কালাম ভাঙনের ভয়ে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে চলে গেছে।
একই গ্রামের গৃহবধূ সালেহা বেগম বলেন, নদীর পাড়ে সন্তানদের আতঙ্কে দিন কাটছে। সবসময় ভিটে হারানোর ভয় মাথায় থাকে। জোয়ার, বৃষ্টি হলে আতঙ্ক দ্বিগুণ হয়ে যায়। আল্লাহ ছাড়া আমাদের রক্ষা করার আর কেউ নেই। বন্যায় জমিও চলে গেছে, এখন আর চাষাবাদ করার কিছু নেই। শুধু ঘরের ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই। একটু বেশি পানি এলে সেটিও চলে যাবে।
Advertisement
ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ২০০৬ সাল থেকে ভাঙন শুরু হয়। আমরা তালতলি বাজারে যাতায়াত করতাম এ সড়ক দিয়ে। জমির ধান কেটে এই রাস্তায় ঘরে আনতাম। এখনতো বাড়িতে এক বস্তা চাল আনতেও অনেক কষ্ট হয়। শহর থেকে মালামাল আনতে গিয়ে কী পরিমাণ দুর্ভোগ হয়, তা আমরা ছাড়া কেউ বুঝবে না।
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে পুরো জগতপুর গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে নদীতে। পাশাপাশি ফাজিলেরঘাট-তালতলি সড়ক পুনর্নির্মাণ করে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করারও জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর পুনর্নির্মাণ হতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে, এখন যেসব ভাঙন দেখা দিয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব ব্যাংকের বরাদ্দের কয়েকটি প্রকল্প এসেছে। সহসা দরপত্র আহ্বান করা হবে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এফএ/জিকেএস
Advertisement