কুমিল্লা নগরীর প্রধান সমস্যা এখন জলাবদ্ধতা। ভারী বা মাঝারি বৃষ্টিপাতে পানি নামার ব্যবস্থা নেই। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, দখল-দূষণে সংকুচিত নদী ও খাল আর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা মিলেই নগরজীবনে দুর্ভোগ নিত্যদিনের। কুমিল্লার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই জলাবদ্ধতা।
Advertisement
সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৪ বছরেও এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান সড়কগুলো জলমগ্ন হয়ে যায়। ডুবে যায় অলিগলি। পানি ঢুকে পড়ে মানুষের বাসা-বাড়ি, কলকারখানা, দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। আর বর্ষা এলেতো কথায় নেই। নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
এদিকে বর্ষা মৌসুমে লালমাই পাহাড়ের ঢলে প্লাবিত হয় সিটি করপোরেশনের দক্ষিণাংশ। জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৪০০ একর ফসলি জমি। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় অনাবাদি হয়ে পড়ছে এসব ফসলি মাঠ। এছাড়াও বর্ষায় ভোগান্তিতে পড়ছে কোটবাড়ি এলাকার রামপুর, গন্ধামতি ও চাঙ্গিনী গ্রামের শত শত মানুষ।
সূত্র মতে, কুমিল্লায় জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আবাসনের বিস্তার। যত্রতত্র গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত দালান-কোঠা। এরমধ্যে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং দখল ও দূষণে দিন দিন খালগুলো পরিণত হচ্ছে সরু নালায়। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে জনদুর্ভোগ দিন দিন চরম আকার ধারণ করেছে।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হলে কুমিল্লা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ডুবে যায় নগরীর প্রধান লাকসাম রোড, জিলা স্কুল রোড, রোইসকোর্স, বিসিক শিল্পনগরী, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সমনের সড়ক, ঈদগাহ এলাকা, ছাতিপট্টি, চর্থা, কান্দিরপাড়-রাণীর বাজার সড়কসহ নগরীর উঁচু-নিচু বিভিন্ন অলিগলি। এতে কয়েকগুণ দুর্ভোগ বেড়ে যায় নগরবাসীর। সেই পানি নামতে ৭-৮ দিন সময় লেগে যায়।
আরও পড়ুন- বৃষ্টিতে হাঁটুপানির নিচে সড়ক, দুর্ভোগে নগরবাসী দখল-দূষণে ধুঁকছে কালিয়ানী খাল ঠিকাদারের অবহেলার মাশুল দিচ্ছে কয়েকশ পরিবারআনিছুর রহমান নামে এক বাসিন্দা বলেন, অপরিকল্পিত দালান-কোঠা নির্মাণ ও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীতে প্রধান সড়কসহ অলিগলি জলমগ্ন হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগ বাড়ে আমাদের। এনিয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো চিন্তা নেই। তাদের হেয়ালিপনায় কেটে গেলো ১৪টি বছর। পৌরসভা থেকে সিটি হয়ে আমরা কী পেলাম? শুধু ট্যাক্সের টাকাই বেড়েছে, বাড়েনি কোনো সুবিধা।
সাইফুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, নগরীর পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন ও নালা তৈরিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। অথচ সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায় পুরো নগরী। এমন লোক দেখানো কাজের কী দরকার। এটি রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় আর নিজেদের পকেট ভারি করার ধান্দা ছাড়া আর কিছুই না।
সিটি করপোরেশনের দক্ষিণাংশে স্থানীয় অন্তত ১০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রামপুর, গন্ধামতি ও চাঙ্গিনীসহ আশপাশের গ্রামের প্রায় ৫০০ একর জমিতে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফসল হচ্ছে না। এক সময় এসব জমিতে ৩টি ফসল হতো। বর্তমান সময়ে এসে এক ফসলও হয় না। ৫০০ একর জমিতে ১০ কেজি ধানও পাওয়া যায় না বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশন অবগত থাকলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের দাবি, সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং রাস্তাঘাটের যে বেহাল দশা, তা সংস্কার করে মানুষের দৈনন্দিন চলাফেরায় দুর্ভোগ কমায়।
Advertisement
নগর বিশেষজ্ঞ আল আমীন খান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে জলাধার ও খালগুলোকে প্রাকৃতিক নকশায় ফিরিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। দুঃখজনক বিষয় হলো, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৪ বছরেও পরিকল্পনা মাফিক কোনো কাজই হয়নি। কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে সদয় হন।
কুমিল্লার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে খালের প্রশস্ততা বাড়িয়ে দিয়ে আর ডাকাতিয়া নদীর গভীরতা আরও বাড়িয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে চারপাশের পানি দ্রুত নেমে যাবে। স্থায়ীভাবে আর পানি আটকে থাকবে না।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভুঁইয়া বলেন, খাল খননের জন্য এরইমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই সেই কাজ আমরা শুরু করবো। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের মধ্যে যেসব ড্রেন রয়েছে সেগুলো পরিষ্কারের জন্য কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে পরিষ্কার অভিযানও শুরু হয়েছে।
এফএ/জেআইএম