দেশজুড়ে

সিলেটে সুপারির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০০ টাকা

সিলেটে সুপারির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০০ টাকা

* আমদানি পণ্যে কর বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে দাম* আঞ্চলিকভাবে কমেছে সুপারি উৎপাদন* তৃতীয় হাত হয়ে বাজারে আসতেই বাড়ছে দাম

Advertisement

সিলেটে সুপারির বাজারে চলছে চরম অস্থিরতা। এক লাফে কেজিতে দাম বেড়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। গেলো ৭-৮ মাস ধরে বাজারের এই অবস্থা চললেও তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি বাজার তদারকিতেও নেই প্রশাসন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুপারির বাজারের এই অস্থিরতার অন্যতম কারণ হলো আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমদানিকৃত পণ্যে কর বেড়ে যাওয়ায় বিদেশ থেকে আসা সুপারির দাম বহুগুণে বেড়েছে। তাছাড়া সিলেটের ব্যবসায়ীরা তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় আরও বেশি দামে সুপারি বিক্রি করতে হচ্ছে।

সিলেটের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, অতীতে সুপারির দাম কিছুটা বাড়লেও তা মাসখানেকের মধ্যে আবার সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসত। কিন্তু এবার দীর্ঘ সময় ধরে সুপারির দাম শুধু বেড়েই চলেছে।

Advertisement

‘আমদানি কর না কমালে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। স্থানীয়ভাবে এবার সুপারির ফলনও কমেছে। তাই পুরো বাজার আমদানিকৃত সুপারি দিয়ে চালাতে হচ্ছে।’

এদিকে বছরের পর বছর সুপারির স্থানীয় উৎপাদনও কমছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বজ্রপাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বহু সুপারি গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবে সুপারি উৎপাদনও হচ্ছে না। ফলে এক বছরের ব্যবধানে স্থানীয় উৎপাদন কমেছে অর্ধেকেরও বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সিলেটে ২,২৩৭ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছিল, উৎপাদন হয়েছিল ২০ হাজার ৬৫৭ মেট্রিক টন। সেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেই আবাদ কমে দাঁড়িয়েছে ১,১৮৪ হেক্টরে, আর উৎপাদন মাত্র ৭,৫৩৪ মেট্রিক টন। যার কারণে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর সিলেটের সুপারির বাজার।

সিলেট অঞ্চলে সুপারির বিপুল পরিমাণ চাহিদা রয়েছে। এখানকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারার সঙ্গে পান-সুপারি গভীরভাবে জড়িত। প্রতিটি ঘরে খাবারের পর পান-সুপারি খাওয়ার একটা রেওয়াজ রয়েছে। অথচ সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে সুপারির চাষ হয় না। জেলার জকিগঞ্জ, কানাইঘাটসহ কিছু উপজেলায় বাড়ির আঙিনায় সীমিত আকারে সুপারি গাছ থাকলেও তা দিয়ে জেলার বিশাল চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়।

Advertisement

সিলেট নগরীর কাজিরবাজার এলাকার সুপারির পাইকারি দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, দেশীয় সুপারি এখন প্রায় অদৃশ্য। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত সুপারি বাজারে আধিপত্য করছে।

‘সিলেটের কোনো ব্যবসায়ী সরাসরি সুপারি আমদানি করেন না। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে সুপারি আমদানি করে থাকেন। তাদের কাছ থেকে সিলেটের ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সিলেটে সুপারি আসায় আরও কিছুটা বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডের সুপারি প্রতিকেজি ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, সিঙ্গাপুরী ছোট থেকে মাঝারি সাইজ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, বড় সাইজ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ান ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং দেশীয় সুপারি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রায় সব ধরনের সুপারি প্রতিকেজি গড়ে ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ৭ থেকে ৮ মাস আগে থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত সুপারি প্রতিকেজি ৩৪০-৪০০ টাকা, সিঙ্গাপুরী ৩৫০-২৮০ টাকা এবং দেশীয় সুপারি ২৫০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হতো।

কাজির বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান বলেন, এই বাজারে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। মাঝেমধ্যে দাম বাড়লেও তা দীর্ঘস্থায়ী হতো না। কিন্তু এবারতো বাজার পুরোপুরি উল্টে গেছে। কর বাড়ানোর পর থেকে দাম আর কমছেই না। বরং দিন দিন আরও বাড়ছে।

কাজিরবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আজিজ অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী তাহমিদ রহমান নাফি বলেন, আমদানি কর না কমালে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। স্থানীয়ভাবে এবার সুপারির ফলনও কমেছে। তাই পুরো বাজার আমদানিকৃত সুপারি দিয়ে চালাতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সিলেটের কোনো ব্যবসায়ী সরাসরি সুপারি আমদানি করেন না। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে সুপারি আমদানি করে থাকেন। তাদের কাছ থেকে সিলেটের ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সিলেটে সুপারি আসায় আরও কিছুটা বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

‘বজ্রপাতে ও ঝড়ঝঞ্ঝায় অনেক সুপারি গাছ মারা যাচ্ছে। তাছাড়া সুপারি একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল, যার ফলন পেতে ১২ থেকে ১৪ বছর সময় লাগে। এই দীর্ঘ সময়ের কারণে অনেকেই আর সুপারি গাছ রোপণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে উৎপাদন ক্রমেই কমে যাচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, বজ্রপাতে ও ঝড়ঝঞ্ঝায় অনেক সুপারি গাছ মারা যাচ্ছে। তাছাড়া সুপারি একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল, যার ফলন পেতে ১২ থেকে ১৪ বছর সময় লাগে। এই দীর্ঘ সময়ের কারণে অনেকেই আর সুপারি গাছ রোপণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে উৎপাদন ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আরিফ মিয়া বলেন, সুপারির দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির ব্যাপারে কেউ অভিযোগও করেননি। শিগগিরই বাজার পরিদর্শন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এফএ/জেআইএম