‘জেলা ফুটবল লিগ সচল করতে হবে, নজর দিতে তৃণমূলে’- ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো এ কথাগুলো বাজছে যুগ যুগ ধরে। ঘটা করে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, জেলার ফুটবল সংগঠকদের ঢাকায় ডেকে এনে পাঁচতারকা হোটেল ভুরিভোজ করিয়ে লিগ শুরুর জন্য হাতে টাকাও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুরু হতে না হতে আবার বাতিলের খাতায় চলে গেছে জেলার লিগ। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, থেমে গেচে আবার মুখ থুবড়েও পড়েছে- এই হলো বাংলাদেশের জেলা ফুটবলের বাস্তবতা।
Advertisement
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ ঘিরে তৈরি হওয়া ফুটবল জাগরণের পর আবার সামনে এসেছে জেলা লিগ। দেশের সাবেক-বর্তমান খেলোয়াড়, কোচ সংগঠকরা ফুটবল জাগরণ ধরে রাখতে যে পরামর্শ দিচ্ছেন সেখানে জেলা লিগের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। এই যেমন সাবেক তারকা ফুটবলার মাসুদ রানা বললেন, ‘অনেক দিন ধরেই দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা বাফুফে একটা জিনিস ভুল করে আসছে। জেলা লিগে নজর দিচ্ছে না। অথচ এই জায়গায়ই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
বাফুফের বর্তমান কমিটির দিকে আঙ্গুল তুলে সাবেক এই ডিফেন্ডার বলেন, ‘এই কমিটি দায়িত্ব নিয়েছে ৮ মাস হয়ে গেছে। জেলার লিগ তো শুরু করতে পারেনি। শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক শীর্ষ লিগ নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। আগে কাজী মো. সালাউদ্দিন ভাই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে গুরুত্ব দিয়েছেন। জেলার লিগ নিয়ে তেমন ভাবনা ছিল না তার। শীর্ষ লিগে যারা খেলেন তারা ভালো টাকা-পয়সা পাচ্ছেন ঠিক আছে। শীর্ষ লিগের প্রধান পাইপলাইন তো জেলা লিগ। সেখান থেকেই খেলোয়াড় উঠে আসবে। তা নাহলে খেলোয়াড় সংকট হবেই।’
হামজা-শামিতসহ যারা বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার জন্য এসেছেন তাদেরকে প্রবাসী বলায় আপত্তি আছে সাবেক এই তারকা ফুটবলারের ‘তাদের প্রবাসী কেন বলা হচ্ছে? তারা বাংলাদেশের ফুটবলার, লাল-সবুজ পাসপোর্টধারী। আমরা বলতে পারি, এই ফুটবলাররা বিদেশি লিগে খেলেন। বিশ্বের বিভিন্ন লিগে খেলা এই ফুটবলারদের নিয়ে আসাটা ইতিবাচক। এটা সব দেশেই আছে। এই ফ্রান্সের কথাই ধরুন। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এই দেশটির জাতীয় দলে এমন অনেক ফুটবলার আছেন।’
Advertisement
জাতীয় দলের সাবেক এ ডিফেন্ডার এই উদ্যোগের আরেকটি ইতিবাচক দিকও দেখছেন। তিনি মনে করেন, ‘বিভিন্ন দেশের লিগ খেলা ফুটবলাররা যদি এভাবে এসে জাতীয় দলে বা ঘরোয়া ফুটবলেও খেলেন তাহলে তাদের সাথে আমাদের স্থানীয় ফুটবলারদের কোনো যোগসূত্র তৈরি হয়ে তারাও অন্য দেশে গিয়ে লিগ খেলার সুযোগ পেতে পারেন। আমাদের কেউ যদি এমন বেটার সুযোগ পান তাতে দেশের ফুটবলের জন্যই ইতিবাচক হবে।’
ভারত, ভুটান ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সর্বশেষ তিনটি ম্যাচ নিয়ে মাসুদ রানা বলেছেন, ‘তিন ম্যাচেই বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। কিছু ভুলের কারণে আমরা ভারত ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে জিততে পারিনি। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের কথা যদি বলি, তাহলে আমি একটাই বলবো একজন দক্ষ স্ট্রাইকারের অভাবে আমরা জিততে পারিনি। ম্যাচ ড্র হয়েছে। তবে ওই ম্যাচ আমাদের জেতা উচিত ছিল। ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ ছিল। যেমন খেলার তেমনই খেলেছে। অনেকে বলেন ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশ আরো অ্যাগ্রেসিভ ফুটবল খেলতে পারলে ভালো হতো। আমি অবশ্য সেটা মনে করি না। কারণ, এটা প্রীতি ম্যাচ। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ আর প্রীতি ম্যাচের মেজাজে পার্থক্য থাকবেই। প্রীতি ম্যাচে কোচকে অনেক কিছু ঝালিয়ে দেখতে হয়।’
সিঙ্গাপুর যে বাংলাদেশের চেয়ে শক্তি-সামর্থ্যে এগিয়ে সেটা মনে করিয়ে দিয়ে মাসুদ রানা বলেন, ‘এই ম্যাচে বাংলাদেশ ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে আবার ব্যবধান কমিয়ে ২-১ করেছে। ওরা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। র্যাংকিংয়েও এগিয়ে। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে এই গ্রুপের অন্যতম শক্তিশালী দল তারা। শেষ দিকে বাংলাদেশ কিন্তু সিঙ্গাপুরকে বেশ চেপে ধরেছিল। তবে গোল আদায় করতে পারেনি। এখানেও সেই স্ট্রাইকারের অভাব ছিল। বেশ কিছু কর্নার পেয়েছিল, কাজে লাগানো যায়নি। উইং থেকে ভালো কিছু ক্রসও ছিল। গোলে পরিণত করা যায়নি। ওই একটাই ঘাটতি ছিল, স্ট্রাইকার। গোল করা খেলোয়াড় রাকিবকে নিচে নামানো হলো যখন তাকে ওপরেই দরকার ছিল। তাকে নিচে নামালে কেন একজন স্ট্রাইকার নেওয়া হয়নি? এই সব ছোটখাটো ভুলের কারণেই সিঙ্গাপুরের কাছে হারতে হয়েছে। আবার শেষ দিকে একটা জেনুইন পেনাল্টি পেয়েছিলাম আমরা। সেটা দেননি রেফারি। বাংলাদেশের ভাগ্যও খারাপ ছিল।’
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের দিন প্রচণ্ড গরমের কথা উল্লেখ করে মাসুদ রানা বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছেন হামজা চৌধুরী, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সেভাবে পারেননি। তাকে ক্লান্ত মনে হয়েছে গরমের কারণে। পরের ম্যাচ অক্টোবরে হংকংয়ের বিপক্ষে। এটাও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গ্রুপের সবচয়ে শক্তিশালী দল হচ্ছে হংকং। এখনকার মতো গরম থাকবে না ওই সময়। তাই হামজা হয়তো আরো ভালো খেলবেন। আরেকটা বিষয় হলো, নতুন পরিবেশে আসা ফুটবলারদের সাথে অ্যাডজাস্টমেন্ট হতে আমাদের খেলোয়াড়দের একটু সময় লাগলেও সেটা হয়ে যাবে। শামিত সোম এসে বেশি বিশ্রামের সময় পাননি। তারপরও তিনি খুবই ভালো খেলেছেন। পুরো মাঠজুড়ে খেলেছেন। আমার শেষ কথা হলো, এই হামজা-শামিত কতদিন খেলে দিতে পারবেন। আমাদের খেলোয়াড় তৈরির দিকে নজর দিতে হবে। দেশব্যাপি জমজমাট লিগই কেবল পারবে জাতীয় দল ও প্রিমিয়ার লিগের পাইপলাইন তৈরি করতে।’
Advertisement
আরআই/আইএইচএস