বাংলাদেশের সংস্কৃতির আধিপত্য অভুত্থানপন্থিদের হাতে নেই। সেটা আছে বাংলাদেশ বিরোধীদের হাতে। কবি আল মাহমুদের জন্মদিনের আয়োজনে এ মন্তব্য করেছেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।
Advertisement
শুক্রবার (১১ জুলাই) কবি আল মাহমুদের ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ছিল এক বিশেষ আয়োজন হয়।
ফারুক ওয়াসিফ ছাড়াও এতে উপস্থিত ছিলেন গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, কবি রেজাউদ্দীন স্টালিন, সংগঠক রেজাবুদ্দৌলা, নজরুল গবেষক অধ্যাপক আনোয়ারুল হক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরিফ খান, গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহীন প্রমুখ।
ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতির আধিপত্য অভুত্থানপন্থিদের হাতে নেই। সেটা আছে বাংলাদেশ বিরোধীদের হাতে। দুঃখজনক হচ্ছে, এটা নিয়ে এই সরকার তেমন কাজ করেনি। ভাস্কর্য-মূর্তি অনেক বানাতে পারবেন, কিন্তু আমাদের বানানো দরকার ছিল প্রতিষ্ঠান, আমাদের দরকার ছিল শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করা। সেটা হয়নি। অভ্যুত্থান হয়েছে, কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির জমিন পরিষ্কার হয়নি। এই জমিন থেকে আগাছা দূর না করে এখানে নতুন কিছু করা কঠিন।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে সেই ঘাঁটি, যেটা দিয়ে ফ্যাসিবাদের পুনর্জন্ম লাভ হয়। আপনি সকল ফ্যাসিস্টের বিচার করে ফেলতে পারবেন, কিন্তু যদি পাল্টা সংস্কৃতি তৈরি করা না যায়, নিজেদের সাংস্কৃতিক বলয় যদি তৈরি করা না যায়, তাহলে ধরে নেবেন এই সাংস্কৃতিক আঙিনা থেকে আবারও ফ্যাসিবাদের পুনর্জন্ম ঘটবে।’
ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আমাদের শুধু মানচিত্র দাগানো আছে, কিন্তু তার পরিচয় প্রতিষ্ঠা সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে, ভাষার ভেতর দিয়ে পুরোপুরি করা যায়নি। আল মাহমুদ সেই কাজটা কিছুটা করেছেন। কবির মর্মের ভেতরে একটা বিশ্বাস, একটা ভালোবাসা, একটা দায়, একটা দরদ থাকতে হয়। সে দায় ছিল বলেই রবীন্দ্রনাথ বড় কবি, তলস্তয় বড় ঔপন্যাসিক। মহৎ শিল্পীরা কখনো নেতৃত্বের পূজা করতে পারেন না। আল মাহমুদও করেননি। যে কারণে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে কবিতায় দেশীয় নন্দনতত্ব সৃষ্টি করেছেন তিনি।’
রেজাউদ্দীন স্টালিন বলেন, আল মাহমুদের নামে বাংলা একাডেমির একটি মিলনায়তনের নামকরণ করতে হবে, সেখান থেকে তার রচনাসমগ্র বের করতে হবে এবং তার নামে একটি পদক প্রবর্তন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতির সংস্কার বিষয়ে শিগগিরই আমরা সরকারের কাছে একটি রূপরেখা প্রস্তাব করবো।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জাতীয় জীবনে নানা সংকটে কবি আল মাহমুদের কবিতা জাতিকে পথ দেখিয়েছে, সংগ্রাম ও বিপ্লবে প্রেরণা যুগিয়েছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্য আবার আল মাহমুদের দিকে প্রত্যাবর্তন করছে স্বমহিমায়। এটাই কল্যাণকামী মহত্তম কবির শক্তিমত্তা। সময়ের প্রয়োজনে কবির সাহিত্যকর্ম ছড়িয়ে দিতে তার নামে ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবী।
Advertisement
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসেন, প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী, জুলাই বিপ্লবের আহত যোদ্ধা কবি ইবরাহীম নীরব, ছড়াকার মামুন সারওয়ার ও দৈনিক আমার দেশ-এর সাহিত্য সম্পাদক কবি মুহিম মাহফুজ প্রমুখ। আল মাহমুদের কবিতা আবৃত্তি করেন নাসিম আহমেদ, শায়লা আহমেদ, মাহবুব মুকুল, বোরহান মাহমুদ, তানজীনা ফেরদৌস ও শাহীন আফজাল।
কালের ধ্বনি সম্পাদক কবি ইমরান মাহফুজের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আল মাহমুদ গবেষক ও কালের কলস সম্পাদক আবিদ আজম। যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সাহিত্য পত্রিকা কালের কলস, কালের ধ্বনি ও ডাকটিকিট।
আরএমডি/জেডএইচ/