রাজধানীতে চলমান ‘জাতীয় বৃক্ষমেলা ও পরিবেশ মেলা ২০২৫’ -তে দেখা মিলল ইনডোর উদ্ভিদের চমৎকার সব সংগ্রহের, যার মধ্যে বিশেষভাবে নজর কাড়ছে নানান জাতের অর্কিড। মেলার বিভিন্ন স্টলে ঝুলন্ত টবে সাজানো আছে ভান্ডা, ক্যাটলেয়া, ডেনড্রোবিয়ামসহ বেশ কয়েকটি রঙিন অর্কিড, যা ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশকেও করে তোলে স্বাস্থ্যকর।
Advertisement
অর্কিড শুধু ঘরের শোভা বাড়ানোর ফুল নয়, বরং ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে এর আরও উপকারিতা আছে। মেলার একাধিক নার্সারি মালিক জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাসাবাড়িতে অর্কিড রাখার প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষ করে যারা বারান্দা, জানালার ধারে কিংবা বসার ঘরের কোণে একটু সবুজ ছোঁয়া চান, তারা এখন ঝুলন্ত অর্কিডকেই বেছে নিচ্ছেন।
ছবি/অধরা মাধুরী
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ২৫,০০০ প্রাকৃতিক ও ৭৫,০০০ হাইব্রিড অর্কিড চিহ্নিত হয়েছে, যা ফুলজাত উদ্ভিদের মধ্যে সর্বোচ্চ বৈচিত্র্যপূর্ণ গোষ্ঠী। এদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কেউ সুগন্ধযুক্ত, কেউ আকর্ষণীয় রঙের, আবার কেউ দীর্ঘদিন ফুল ধরে রাখে। এ সব কারণে অর্কিড বিশ্বজুড়েই ঘর সাজানোর অন্যতম পছন্দের গাছ।
Advertisement
ছবি/অধরা মাধুরী
বাজারে পাওয়া নানা জাতের অর্কিডের মধ্যে কিছু কিছু গাছ বাংলাদেশি আবহাওয়ার জন্য একেবারে উপযুক্ত। যেমন- ভান্ডা, ডেনড্রোবিয়াম বা ক্যাটলেয়া – এসব গাছ হালকা আলো, সঠিক বাতাসপ্রবাহ ও সীমিত পরিমাণ পানিতেই সুস্থভাবে বড় হয়। যারা গাছের যত্নে নতুন, তাদের জন্যও এগুলোর পরিচর্যা তুলনামূলকভাবে সহজ।
মেলায় দেখা মেলে ভান্ডা ও ক্যাটলেয়া জাতের অর্কিডের। ছবি/অধরা মাধুরী
অর্কিডের উপকারিতা>> ঘরের শোভা বাড়ায় ও মানসিক প্রশান্তি দেয়।>> কিছু অর্কিড বায়ু থেকে টক্সিন শোষণ করে বাতাস বিশুদ্ধ করে।>> নিয়মিত গাছের যত্ন নেওয়া একধরনের মাইন্ডফুলনেস বা মানসিক থেরাপি হিসেবেও কাজ করে।
Advertisement
এছাড়া আর্কিডে রেণুর পরিমাণ কম থাকায় এটি সহজে অ্যালার্জি তৈরি করেনা।
স্পাইডার অর্কিড। ছবি/অধরা মাধুরী
বাসায় যেভাবে অর্কিড রাখবেন?>> অর্কিড সাধারণত আলো ও বাতাসপ্রবাহ ভালোবাসে, তবে তারা সরাসরি রোদ সহ্য করতে পারে না।>> জানালার পাশে বা বারান্দায় হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে পারেন।>> ভান্ডা অর্কিড ঝুলিয়ে রাখা সবচেয়ে ভালো।>> ক্যাটলেয়া বা ফ্যালানোপসিস-জাত অর্কিডকে ছোট টবে রেখে জানালার ধারে রাখা যায়।>> গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোড়া ভিজে থাকলে অর্কিড মরে যায়।
মেলা থেকেই এভাবে সাজানো গাছ পেয়ে যাবেন। ছবি/অধরা মাধুরী
বৃক্ষমেলায় দেখা গেছে, বাংলাদেশি আবহাওয়ায় যে অর্কিডগুলো সবচেয়ে ভালো মানিয়ে নেয়, তার মধ্যে রয়েছে->> ভান্ডা: সূর্যের আলো ও বাতাসপ্রবাহ পেলে দুর্দান্ত ফুল ফোটে এ গাছে। এটি ঝুলন্ত টবে রাখা যায়।>> ডেনড্রোবিয়াম: এটির কম যত্ন হলেই চলে, মাঝারি আকারের ফুল হয়।>> ক্যাটলেয়া: এই জাতের গাছে বড় ও বাহারি রঙের ফুল হয়। হালকা আলোতে রেখে মাঝে মাঝে পানি দিলেই হয়।
এছাড়া মেলায় হোইয়া প্ল্যান্টের (ডানে) উপস্থিতিও চোখে পড়েছে মেলায়, যা ইনডোর গাছ হিসেবে ভীষণ জনপ্রিয় হলেও অর্কিড নয়। ছবি/অধরা মাধুরী
যারা গাছ ভালোবাসেন বা ঘরের পরিবেশ একটু সবুজ ও প্রাণবন্ত করতে চান, তাদের অবশ্যই স্থানীয় বৃক্ষমেলায় একবার ঘুরে আসা উচিত। বৃক্ষমেলার এই অর্কিড স্টলগুলোতে গিয়ে কেবল গাছ কেনার সুযোগই নয়, বরং গাছের পরিচর্যা, জাত চেনা, এবং ইনডোর সাজসজ্জা সম্পর্কে হাতেকলমে ধারণা নেওয়ার সুযোগ মেলে।
এএমপি/জেআইএম