২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। এই চার মাসে বাংলাদেশ ২ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।
Advertisement
অন্যদিকে, একই সময়ে ভিয়েতনাম ১৬ দশমিক ০৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ৫ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার, চীন মাত্র শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, ইন্দোনেশিয়া ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার এবং ভারত ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
আরও পড়ুন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৬.৬৪ শতাংশ পোশাকখাতে টেকসই রূপান্তর: সুইসকন্টাক্ট-বিজিএমইএ সমঝোতা স্মারক সই পরিবেশবান্ধব লিড সনদ পেল আরও ৪ পোশাক কারখানাযুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) এক পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে।
Advertisement
রপ্তানিকারক ও বিশেষজ্ঞরা তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এ ধরনের প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে তারা এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য নতুন কৌশল ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক শুল্ক হার নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে এমন প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে প্রধান কারণ হলো প্রতিযোগিতামূলক মূল্য, স্থিতিশীল উৎপাদন এবং মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ। তবে শুধু স্বল্পমেয়াদি সুবিধা নয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে এই ধারা ধরে রাখা কঠিন হবে।’
আরও পড়ুন বাণিজ্য বৈষম্যের ঝুঁকিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতি বাণিজ্য অস্থিরতার মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে বাংলাদেশ মার্কিন শুল্ক থাকলে মাসে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলার গুনতে হবে‘বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা এখন শুধু দাম নয়, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, শ্রম অধিকার এবং দ্রুত সরবরাহকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ জায়গাগুলোতে বাংলাদেশকে আরও এগোতে হবে।’ যোগ করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বস্ত্রখাতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা দিনদিন জোরালো হচ্ছে। সদ্য প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশ ২৮ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, যা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য। তবে ইউনিট মূল্যের দিক থেকে আমাদের প্রবৃদ্ধি মাত্র শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ, যেখানে ভিয়েতনাম ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অন্যদিকে চীন, ভারত ও পাকিস্তানের ইউনিট মূল্যে হ্রাস পরিলক্ষিত হয়েছে।
Advertisement
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, মূল্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। আমরা সংখ্যায় ভালো করলেও ইউনিট মূল্যে স্থবিরতা আমাদের উদ্বিগ্ন করে। বিশেষ করে ভিয়েতনাম যেখানে ইউনিট মূল্যে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, তা আমাদের জন্য একটি বার্তা—মাত্রা ও মানের সমন্বয়ে আরও কৌশলী হতে হবে।’
‘বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমাদের টেকসই উৎপাদন, উদ্ভাবন এবং ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে মূল্য নির্ধারণে ভালো অবস্থানে থাকা সম্ভব হয়। শুধু পরিমাণে নয়, মান ও মূল্যে এগিয়ে যাওয়াই হবে আমাদের ভবিষ্যতের পথ’, বলে মন্তব্য করেন রুবেল
পোশাক রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অর্ডার বেড়েছে। কারণ চীন থেকে কিছু অর্ডার সরেছে। সেই সুযোগটা আমরা কাজে লাগাতে পেরেছি। তবে এ সুবিধা যদি দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে চাই, তাহলে আমাদের আরও উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষ শ্রমিক এবং পণ্যের বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেতারা এখন বাংলাদেশকে নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হিসেবে দেখছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ ও মান বজায় রাখায় আমরা ভালো অবস্থানে আছি। তবে ডলার সংকট, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি এবং লজিস্টিক সমস্যা এখনই সমাধান না হলে এই গতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন বাংলাদেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করা উচিত হয়নি: পল ক্রুগম্যান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে বড় আঘাত, সুবিধা পাবে ভারত: রয়টার্স ২০২৫ সালে দ. এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.৬ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে করণীয়উন্নত প্রযুক্তি ও অটোমেশন: উৎপাদন খাতে আরও অটোমেশন আনতে হবে যাতে উৎপাদন ব্যয় কমে এবং গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
বাজার বৈচিত্র্য: যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে বিভিন্ন রিটেইলার ও ব্র্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং নতুন মার্কেটে প্রবেশের উদ্যোগ নিতে হবে।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ: শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
মানবসম্পদ উন্নয়ন: শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বাড়াতে সরকার ও বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
আইএইচও/এমএমএআর/জিকেএস