অর্থনীতি

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উন্নত হয়েছে, কাজের পরিবেশের উন্নতি হয়নি

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উন্নত হয়েছে, কাজের পরিবেশের উন্নতি হয়নি

‘গত ১২ বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও অবকাঠামোগত নিরাপত্তার উন্নতি ঘটলেও শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে। শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতে কারখানার মালিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার ওপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

Advertisement

রানা প্লাজা ভবন ধসের ১২তম বার্ষিকী উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার।

পোশাক খাতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থা কী?

আমি যদি বৈদ্যুতিক, অগ্নিনির্বাপক ও ভবন নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলতে চাই, রানা প্লাজা ভবন ধসের সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। কিন্তু আত্মতুষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অগ্রগতি ধরে রাখতে, উন্নতি টেকসই করতে পর্যবেক্ষণ ও ক্রমাগত উন্নয়ন আবশ্যক।

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। কিন্তু কাজের পরিবেশের উন্নতি হয়নি। সমষ্টিগত দর কষাকষি, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার এখনো পূর্ণ গতি পায়নি। ইউনিয়নে যোগদান করলে শ্রমিকদের হুমকি দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়রানি করা হচ্ছে

Advertisement

আপনি কি মনে করেন কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার সঙ্গে শ্রমিকদের অধিকারের উন্নতি হয়েছে?

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। কিন্তু কাজের পরিবেশের উন্নতি হয়নি। সমষ্টিগত দর কষাকষি, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার এখনো পূর্ণ গতি পায়নি। ইউনিয়নে যোগদান করলে শ্রমিকদের হুমকি দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়রানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিদ্যমান মজুরি কাঠামো জীবিকার জন্য যথেষ্ট নয়।

শ্রমিক অধিকারের উন্নতির জন্য কী সুপারিশ করবেন?

প্রথমে আমাদের সস্তা শ্রমের আখ্যান পরিবর্তন করতে হবে। তারপরে কারখানার মালিক ও সরকারকে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে।

আরও পড়ুন রানা প্লাজার সোহেলের জামিন স্থগিত থাকবে: আপিল বিভাগ আজও আঁতকে ওঠেন রানা প্লাজার সেই রেশমা রানা প্লাজা ধসের ‘খবর প্রচারে’ ব্যবসা হাতছাড়া

শুধু কারখানা নয়, শ্রমিকদের বাসস্থান নিরাপদ ও বসবাসযোগ্য করতে হবে। শ্রমিকদের অধিকারের সঙ্গে তাদের সন্তানদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।

এখনো অনেক কারখানায় শ্রমিকরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পাচ্ছেন না। আইন অনুযায়ী সময়মতো মজুরি দেওয়া হয় না। কর্মীদের অবসরকালীন সুবিধাগুলো যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করা হয় না। এগুলো আইন ও শ্রমিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

Advertisement

একটি পূর্ণাঙ্গ শ্রমিক নিরাপত্তার জন্য কারখানার মালিকদের এখন পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অধিকারের বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে।

শরীর সুস্থ না থাকলে শ্রমিক কাজ করতে পারে না। কিন্তু অনেক কারখানায় এখন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নেই, স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক, মাস্ক, গ্লাভস বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকে না। শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার জন্য কারখানার মালিকদের এখন পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর বেশি মনোযোগ দিতে হবে

সরকার ও কারখানার মালিকদের শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনের বাধা দূর করতে হবে। তাদের অবশ্যই ইউনিয়নে অংশগ্রহণের জন্য হয়রানি বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বর্তমান সরকারের কাছে শ্রমিকদের অধিকার ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রত্যাশা কী?

আমরা সংস্কারের কমিশনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনেক সুপারিশ করেছি। সরকার যদি সুপারিশগুলো বিশেষ করে ন্যায্য মজুরি, শ্রমিকদের অধিকারের সমস্যা, মজুরি বোর্ডের মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং শ্রমিক শিশুদের সুস্থতা বাস্তবায়ন করে, তাহলে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে।

শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

শরীর সুস্থ না থাকলে শ্রমিক কাজ করতে পারে না। কিন্তু অনেক কারখানায় এখন পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নেই, স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক, মাস্ক, গ্লাভস বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকে না। শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার জন্য কারখানার মালিকদের এখন পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ওপর বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আপনার সুপারিশ কী?

শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতিটি কারখানায় আধুনিক ও কার্যকর ব্যবস্থা থাকা দরকার। এজন্য প্রয়োজন নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মেডিকেল সুবিধা নিশ্চিত করা, কাজের পরিবেশে পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা, আগুন, ধুলা, শব্দ ও রাসায়নিক থেকে সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া, বিশ্রাম ও মাতৃত্বকালীন ছুটির যথাযথ প্রয়োগ, সুরক্ষিত স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষণ।

আইএইচও/এএসএ/এএসএম