অর্থনীতি

অভ্যন্তরীণ-বহির্বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

অভ্যন্তরীণ-বহির্বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

‘বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নবনির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর শিল্পের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করবো। বিশেষ করে গ্যাস সংকট নিরসন, রপ্তানির ক্ষেত্রে পারস্পরিক শুল্ক সুবিধা নিশ্চিত করা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে স্বল্প সুদে তহবিল নিশ্চিত করার প্রতি বিশেষ নজর থাকবে।’

Advertisement

জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু শিল্পের টেকসই উন্নয়নে বাস্তবমুখী এসব উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইব্রাহীম হুসাইন অভি।

আপনার দায়িত্ব গ্রহণের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বা প্রাধান্য পাওয়া কাজ হবে কোনটি?

সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হবে দেশের তৈরি পোশাক খাতের সামনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।

আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবো, যাতে উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পেতে পারেন। একইসঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি সংকটের কার্যকর এবং টেকসই সমাধান খোঁজা হবে

Advertisement

অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে চলমান জ্বালানি সংকট। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্পসুদে সহজ শর্তে ঋণের অভাব। বহির্বিশ্বের চাপও বাড়ছে—বিশেষ করে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রক্রিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

এই সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবো, যাতে উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে স্বল্পমেয়াদি ঋণ পেতে পারেন। একইসঙ্গে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি সংকটের কার্যকর এবং টেকসই সমাধান খোঁজা হবে।

আরও পড়ুনবিজিএমইএকে প্রকৃত রপ্তানিকারকদের সংগঠন হিসেবে দেখতে চান সদস্যরাপোশাকশিল্পে নিরাপত্তা অগ্রগতি টেকসই করার উপযুক্ত সময় এখনকর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা উন্নত হয়েছে, কাজের পরিবেশের উন্নতি হয়নি

এই মূল ইস্যুগুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়েই তৈরি পোশাক খাত আরও প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাবো। আমরা অডিট প্রক্রিয়াকে আরও সহজ, কার্যকর ও সময়োপযোগী করতে চাই, যাতে সদস্যরা দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারেন। এসব মূল ইস্যু ঘিরেই আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করবো।

সদস্যদের জন্য সার্ভিস চার্জ নির্ধারণে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রথম বোর্ড মিটিংয়েই সদস্যদের জন্য একটি যৌক্তিক ও সমন্বিত সার্ভিস চার্জ কাঠামো নির্ধারণ করবো। এখানে আমরা চাই এসএমই খাত এবং বৃহৎ শিল্প উভয়ের জন্য উপযোগী ও টেকসই একটি পদ্ধতি তৈরি করতে। আমরা সদস্যদের জন্য সার্ভিস চার্জ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমি আশা করি, সার্ভিস চার্জ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারবো।

Advertisement

তাহলে কি এসএমই উদ্যোক্তা ও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য সার্ভিস চার্জে পার্থক্য থাকবে?

হ্যাঁ, এ বিষয়ে আমরা ভাবছি। তবে কিছু সার্ভিস থাকবে যা সবার জন্য সমান হবে, বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থান ও উন্নয়নমূলক সেবা। আমরা চাই নারীরা যেন এই খাত থেকে পিছিয়ে না পড়েন বরং নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

নির্বাচনের সময় আপনি যে ম্যানিফেস্টো দিয়েছেন, তার বাস্তবায়ন কীভাবে করবেন?

আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম একটি স্বচ্ছ, আধুনিক ও সদস্যকেন্দ্রিক বিজিএমইএ গড়ার। আশা করছি দুই বছরের মধ্যে আমাদের অনেক পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হবে। কিছু কিছু পরিকল্পনা থাকবে চলমান পর্যায়ে, তবে প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করবো।

শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে আপনি কী করবেন?

শ্রমিকদের অধিকার রক্ষাই সংগঠনের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবো। শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়ানো হবে।

শ্রমিকদের অধিকার রক্ষাই সংগঠনের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবো। শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়ানো হবে

পাশাপাশি শ্রম আইন ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কার্যকর নজরদারি নিশ্চিত করা হবে, যাতে কোনো শ্রমিকের অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়। গার্মেন্টস খাতে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় যদি শ্রমিকদের প্রতি সুবিচার না থাকে। আমরা শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষ ব্যবস্থা নেবো, স্বাস্থ্যসেবা ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নতুন কর্মসূচি চালু করবো।

ভবিষ্যতের বিজিএমইএ কেমন দেখতে চান?

আমি চাই বিজিএমইএ হোক একটি দক্ষ, গতিশীল ও আধুনিক প্ল্যাটফর্ম, যেটি শুধু শিল্প মালিকদেরই নয়, শ্রমিক, নারী উদ্যোক্তা এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদার হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।

আইএইচও/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম